রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। গতকাল মঙ্গলবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে ব্রিফিংকালে তিনি এসব পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে সরাসরি রেমিট্যান্স পাঠানোর সুবিধা : ড. আসিফ নজরুল জানান, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যারা প্রবাসে কর্মরত আছেন, তারা সরাসরি রেমিট্যান্স পাঠিয়ে সেই ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন। এ জন্য ব্যাংকের সঙ্গে একটি সমঝোতা হয়েছে, যার মাধ্যমে প্রবাসী কর্মীরা তাদের রেমিট্যান্স সরাসরি ব্যাংকে জমা দিয়ে ঋণ শোধ করতে পারবেন। এ উদ্যোগ প্রবাসী কর্মীদের হয়রানি কমাবে এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে সহায়ক হবে বলে আশা করছেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের পাশাপাশি আরো ১২টি ব্যাংকের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা তাদের বলেছি যে, প্রবাসীদের ঋণের প্রয়োজন আছে, আপনারাও দিন। তারা এ বিষয়ে সম্মতি প্রকাশ করেছে, তবে ক্রেডিট গ্যারান্টি লাগবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের সচিবের আলোচনা হয়েছে এবং আমরা আশা করছি, অচিরেই ক্রেডিট গ্যারান্টি পাওয়া যাবে।’
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের বুথ স্থাপন এবং সহজলভ্য সেবা : প্রবাসীদের সহজ সেবা নিশ্চিত করতে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের বুথ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ড. আসিফ নজরুল জানান, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের বুথ সোনালী এবং অগ্রণী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় স্থাপন করা হবে, বিশেষ করে যেসব স্থানে প্রবাসী কর্মীরা বেশি বসবাস করেন। এতে প্রবাসী কর্মীরা আরো সহজে ব্যাংকিং সুবিধা নিতে পারবেন।
শ্রম কল্যাণ উইংয়ের জবাবদিহিতা বৃদ্ধি : প্রবাসী কর্মীদের বিভিন্ন অভিযোগের সুষ্ঠু সমাধান নিশ্চিত করতে শ্রম কল্যাণ উইংয়ের কার্যক্রমে আরো জবাবদিহিতা আনার কথা জানিয়েছেন ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা দূতাবাসে অবস্থিত শ্রম কল্যাণ উইংকে ফর্ম ছাপিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। তাদের কাছে আসা প্রতিটি অভিযোগের রেকর্ড রাখতে হবে এবং সেগুলোর সমাধানের জন্য আমাদের কাছে নিয়মিত রিপোর্ট জমা দিতে হবে। আমরা দৈবচয়নের ভিত্তিতে সেসব চেক করে দেখব যে, কাজটি সঠিকভাবে হচ্ছে কি না।’
তিনি আরো উল্লেখ করেন, ‘যদি কোনো কর্মকর্তা তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন না করেন, প্রয়োজনে আমরা সেখানে পরিবর্তন আনব। এখানে আমরা কোনো ধরনের ছাড় দেব না।’
মানি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর নতুন ব্যবস্থা : আসিফ নজরুল আরো বলেন, রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে মানি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর মাধ্যমে পাঠানো অর্থ বাংলাদেশে যে ব্যাংকে জমা হয়, সেই ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সমঝোতা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এর ফলে প্রবাসীরা বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে আরো সুবিধা পাবেন এবং সরাসরি ব্যাংকে টাকা জমা পড়বে। তিনি বলেন, ‘এটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে কি না, তা বাংলাদেশ ব্যাংকের ম্যানেজার পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে আমরা আশা করছি, এতে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরো বাড়বে এবং প্রবাসী কর্মীরা হুন্ডির পরিবর্তে সরাসরি বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে আরো উৎসাহিত হবেন।’
ওয়েজ আর্নার্স বন্ডের ক্রয়সীমা বাতিলের প্রস্তাব : প্রবাসীদের আরো বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ওয়েজ আর্নার্স বন্ডের ক্রয়সীমা তুলে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। আসিফ নজরুল বলেন, ‘ওয়েজ আর্নার্স বন্ড কেনার ক্ষেত্রে বর্তমানে সর্বোচ্চ সীমা এক কোটি টাকা, যা বাতিল করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা চেয়েছি। এতে আর কোনো ক্রয় সীমা থাকবে না এবং প্রবাসীরা আরো বেশি বন্ড কিনতে পারবে, যা রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে সহায়ক হবে।’
ড. আসিফ নজরুলের এসব উদ্যোগ প্রবাসী কর্মীদের জন্য সহায়ক হবে এবং দেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়িয়ে দেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। সরকার আশা করছে, এই উদ্যোগগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হলে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর হার আরো বাড়বে এবং অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।