ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী দক্ষিণ কোরিয়া

বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী দক্ষিণ কোরিয়া

বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-সিক সম্প্রতি বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী এবং দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। চট্টগ্রামের কাছে কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (কেইপিজেড) পরিদর্শনকালে তিনি এই মন্তব্য করেন। রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-সিক বলেন, ‘কোরিয়া ঢাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে প্রস্তুত, যেমনটি আমরা এরই মধ্যে রেডিমেড গার্মেন্টস (আরএমজি) সেক্টরে করেছি।’ তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ব্যবসা-বান্ধব এবং পূর্বাভাসযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত।

ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতির প্রয়োজন : রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আরো বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য ব্যবসা-বান্ধব, পূর্বাভাসযোগ্য এবং স্থিতিশীল পরিবেশের উন্নতি অন্তর্বর্তী সরকারের কাজগুলোর মধ্যে শীর্ষ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।’ ঢাকায় কোরীয় দূতাবাস বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহী বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি : দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার তুলে ধরেন, যা গত ২০ বছরে ৫ শতাংশের ওপর রয়েছে।

তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, ২০২৬ সালে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা থেকে উত্তরণ টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় বিদেশী পুঁজি আকর্ষণে সহায়তা করবে। রাষ্ট্রদূত কোরিয়া এবং বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ) সম্পর্কে চলমান আলোচনারও তাৎপর্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই চুক্তি কোরিয়া বর্তমানে বাংলাদেশকে যে জেনারেলাইজড সিস্টেম অফ প্রেফারেন্স (জিএসপি) সুবিধা প্রদান করছে, তা শুধুমাত্র প্রসারিত করবে না বরং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতেও সহায়তা করবে।

উন্নয়ন সহযোগিতার প্রকল্প : রাষ্ট্রদূত আরো জানান, বাংলাদেশ সরকারের সাথে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা তহবিল, কোরীয় সরকারের কাছ থেকে সফট লোন এবং পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ মেকানিজমের মাধ্যমে বেশ কিছু প্রকল্প নিয়ে আলোচনা চলছে। কোরীয় দূতাবাস আশা করে যে চলমান প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি মসৃণ হবে এবং বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখবে। তিনি বলেন, ‘কোরীয় কোম্পানিগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো প্রকল্পে বিলম্ব করে না এবং তারা সময়মতো কাজ সম্পন্ন করার দিকে মনোনিবেশ করে।’

নতুন ক্ষেত্রের সম্ভাবনা : রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-সিক পাদুকা, হালকা শিল্প, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি), ফার্মাসিউটিক্যালস, জাহাজ নির্মাণ, নীল অর্থনীতি, গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা, কৃষি ও কৃষি যন্ত্রপাতি, গ্রিন হাউস এবং কার্বন ট্রেডিং প্রকল্পের মতো নতুন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়ানোর সম্ভাবনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘কোরীয় কোম্পানির নতুন প্রযুক্তি রয়েছে, অন্যদিকে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো নতুন ব্যবসা শুরু করতে পারে।’

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন : দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো গভীর করার বিষয়ে আলোকপাত করে কেইপিজেডের সভাপতি জাহাঙ্গীর সাদাত এবং ডিসিএবি সভাপতি নুরুল ইসলাম হাসিবও বক্তব্য রাখেন। তারা এই সম্পর্কের উন্নয়নে কিভাবে উভয় দেশ সহযোগিতা করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করেন। রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-সিক আশা প্রকাশ করেন যে, দুই দেশের মধ্যে কার্যকরী সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে এবং দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে কাজ করবে। এভাবে, দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে এবং একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে আগ্রহী, যা উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হতে পারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত