দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশের ইলিশ ভারতে রপ্তানি শুরু হয়েছে। প্রথম চালানে ৫৪ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। এ চালানে ১০ জন রপ্তানিকারক ইলিশ রপ্তানি করেন। প্রতি কেজি ইলিশের মূল্য ১০ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১,১৮০ টাকা। ভারতের বাজারে ইলিশের চাহিদা এবং দুর্গাপূজার গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রতি বছর বিশেষভাবে এই ইলিশ রপ্তানি অনুমোদন দেয়া হয়। তবে, অন্যান্য সময়ে ইলিশ রপ্তানি সীমিত রাখা হয়। সরকার এবার মোট ২ হাজার ৪২০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে, যা আগামী ১৩ অক্টোবরের মধ্যে শেষ করতে হবে। বিভিন্ন ব্যবসায়িক সূত্র থেকে জানা গেছে, ইলিশ রপ্তানি বন্ধ থাকার পর ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার ইলিশ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। তবে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের স্বার্থে দুর্গাপূজা উপলক্ষে বিশেষ বিবেচনায় রপ্তানি চালু করা হয়েছে। গেল বছর প্রায় ৩ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছিল। এ বছর রপ্তানির অনুমোদিত পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে ২ হাজার ৪২০ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে।
দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে ইলিশ রপ্তানি : কলকাতার ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এফআইএ) পক্ষ থেকে গত ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের কাছে একটি অনুরোধ পাঠানো হয়, যাতে দুর্গাপূজার আগে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদনের বিষয়টি বিবেচনা করতে বলা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার ভারতের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয়।
ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, ইলিশ রপ্তানি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বেনাপোল ফিশারিজ কোয়ারেন্টাইন অফিসার মাহবুবুর রহমান জানান, গত বৃহস্পতিবার বিকালে ৫৪ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। প্রতি কেজি ইলিশের দাম ১০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, সব কাগজপত্র সম্পন্ন করে ইলিশের রপ্তানির জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, যাতে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো ভারতে দ্রুত প্রবেশ করতে পারে।
বন্দর সংশ্লিষ্ট প্রস্তুতি ও কার্যক্রম : বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক সজিব নাজির জানিয়েছেন, রপ্তানি কার্যক্রম দ্রুত ও নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। ইলিশের চালানগুলো যাতে কোনো ধরনের দেরি ছাড়াই ভারতে প্রবেশ করতে পারে, সে বিষয়ে বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে। রপ্তানি কার্যক্রমে কাস্টমস ও অন্যান্য বন্দর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছেন। বেনাপোল কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার সাফায়েত হোসেন জানান, ইলিশের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে সাজ্জাদ এন্টারপ্রাইজ, যারা এই চালানের ইলিশ রপ্তানি করছে। ভারতের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে আর জে ইন্টারন্যাশনাল। পণ্য ছাড়করণের জন্য সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ লজিস্টিক।
৪৯টি প্রতিষ্ঠান পেয়েছে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি : এ বছর মোট ৪৯টি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানকে ইলিশ রপ্তানির জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ অনুমোদনের আওতায় প্রতিষ্ঠানগুলো ১৩ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে হবে। প্রথম চালানের পর, পরবর্তী কয়েকদিনে আরো ইলিশ রপ্তানি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে ইলিশের চাহিদা ও মূল্যবৃদ্ধির কারণেই রপ্তানির এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে দেশি বাজারে ইলিশের সরবরাহ নিশ্চিত রাখার জন্য রপ্তানি সীমিত রাখা হয়েছে এবং বছরের অন্যান্য সময়ে ইলিশ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকে। সাধারণ ব্যবসায়ীদের মতে, ইলিশ রপ্তানি দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক উন্নত করার পাশাপাশি বাংলাদেশি ইলিশের আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।