ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত ফলের প্রত্যাশা

অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত ফলের প্রত্যাশা

টাস্কফোর্সের কাজ এগিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা : বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পুনরায় সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে গঠিত অর্থনৈতিক কৌশল পুনঃনির্ধারণ টাস্কফোর্সের কাজ আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করবে বলে আশা করছেন এর সভাপতি ড. কেএএস মুর্শিদ। তিনি বলেছেন, দেশের অর্থনীতি বর্তমানে যে অবস্থায় রয়েছে, সেখান থেকে কীভাবে কার্যকরভাবে এগিয়ে নেয়া যায়, সে বিষয়ে টাস্কফোর্স স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করছে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের নাজিয়া-সালমা সম্মেলন কক্ষে টাস্কফোর্সের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ড. মুর্শিদ এ পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।

স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার প্রস্তাব : ড. মুর্শিদ বৈঠকে জানান, ‘আমরা সরকারকে স্বল্পমেয়াদি এমন একটি পরিকল্পনা দেব, যার ফলাফল আগামী ১ থেকে ২ বছরের মধ্যে দেখা যাবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এটা পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বিকল্প নয়, বরং এটি একটি স্বতন্ত্র পরিকল্পনা হবে।’ টাস্কফোর্সের লক্ষ্য হলো দেশের অর্থনীতির ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করা এবং টেকসই ও কার্যকর পরিকল্পনা তৈরি করা, যাতে অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা যায়।

সুশাসনের ঘাটতি ও লিকেজ বন্ধে উদ্যোগ : বৈঠকে বিভিন্ন খাতের ঘাটতি এবং সম্ভাব্য সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধানে টাস্কফোর্স একটি সমন্বিত পরিকল্পনা তৈরি করবে।

টাস্কফোর্সের পরিকল্পনা অনুযায়ী, বর্তমান অর্থনীতির দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর লিকেজ বন্ধের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ড. মুর্শিদ বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির যে সব অংশ ক্ষতিগ্রস্ত, আমরা সেই জায়গাগুলো নিয়েই কাজ করব।’ তিনি আরো বলেন, সুশাসনের যেসব জায়গায় ঘাটতি রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের পরিকল্পনা করা হবে। বিশেষ করে কৃষি, শিল্প উৎপাদন, বাণিজ্য এবং উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেয়া হবে, যাতে দেশের অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

টাস্কফোর্সের সদস্যদের সক্রিয় অংশগ্রহণ : বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন টাস্কফোর্সের অন্যান্য সদস্যরাও। এর মধ্যে ছিলেন পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (সচিব) ড. কাউসার আহমদ, ড. ফাহমিদা খাতুন, ড. সেলিম রায়হান, ড. মঞ্জুর হোসেন, ড. আব্দুর রাজ্জাক, ড. শামসুল আলম, ড. রুমানা হক, নাসিম মঞ্জুর, এবং ফাহিম মাশরুর। ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বৈঠকে বিভিন্ন কৌশল ও পরিকল্পনার উপর নির্দেশনা দেন। তিনি টাস্কফোর্সকে কাজের পরিধি এবং গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেন, যাতে ভবিষ্যতে কাজগুলো সুনির্দিষ্টভাবে এগিয়ে নেয়া যায়।

অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের আশা : ড. মুর্শিদ বলেন, টাস্কফোর্সের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের অর্থনীতিকে যে সংকটময় অবস্থায় রয়েছে, সেখান থেকে পুনরুদ্ধার করা এবং টেকসই উন্নয়নের পথে নিয়ে আসা। ‘আমরা চেষ্টা করব অর্থনীতিকে গো অন করে ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনার,’ বলেন তিনি। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা হয়তো সবকিছু করতে পারব না, তবে যেসব জায়গা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, আমরা সেগুলো নিয়েই কাজ করব।’ তার মতে, বর্তমান লিকেজগুলো বন্ধ করে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে সুশাসন নিশ্চিত করা হবে।

টাস্কফোর্সের কাঠামো ও গঠন : টাস্কফোর্সটি গত ১১ সেপ্টেম্বর গঠিত হয়, যার মূল উদ্দেশ্য হলো বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ এবং প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণ।

এই টাস্কফোর্সের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক ড. কেএএস মুর্শিদ। টাস্কফোর্সের মূল উদ্দেশ্য হলো বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর কার্যকর সমাধান বের করা। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য কৃষি, শিল্প উৎপাদন, বাণিজ্য এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে।

এ ছাড়া টাস্কফোর্সের অন্যান্য সদস্যদের সহযোগিতায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার দিকেও নজর দেয়া হবে। ড. মুর্শিদ বলেন, ‘আমরা স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করছি, তবে দীর্ঘমেয়াদে কীভাবে অর্থনীতিকে আরো কার্যকরভাবে এগিয়ে নেয়া যায়, সেই বিষয়ে পরামর্শও দেয়া হবে।’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা : টাস্কফোর্সের পরবর্তী বৈঠকে আরো সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নেয়া হবে। ড. মুর্শিদ জানান, ‘আমরা আগামী বৈঠক থেকে সুনির্দিষ্টভাবে কাজ শুরু করব এবং টাস্কফোর্সের সদস্যদের সহযোগিতায় অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এবং উন্নয়নের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ এই টাস্কফোর্সের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে যে সংকট চলছে, তা সমাধানের জন্য একটি সুসংহত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত