পুনরায় শুরু অনিশ্চিত
ভারতের অর্থায়নে আট রেল ও সড়ক প্রকল্প স্থগিত
প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
ভারতের অর্থায়নে পরিচালিত আটটি গুরুত্বপূর্ণ রেল ও সড়ক প্রকল্পের কাজ প্রায় দেড় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এর ফলে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন আরো বিলম্বিত হচ্ছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতীয় ঠিকাদারি এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা নিরাপত্তার কারণে বাংলাদেশ ত্যাগ করায় এসব প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রকল্পের অগ্রগতিতে বাধা : ভারতীয় অর্থায়নে চলমান প্রকল্পগুলোতে অংশ নেয়া ভারতীয় কর্মীরা ফিরে আসবেন বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন বাংলাদেশের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। গত ১০ সেপ্টেম্বর এক বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, ভারতের অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলো দেশের জন্য অন্তত গুরুত্বপূর্ণ এবং এগুলোর কাজ চলমান থাকবে। একই দিনে, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাও জানিয়েছিলেন যে, ভারতীয় ঠিকাদাররা দেশে ফিরে আসার পর কাজ পুনরায় শুরু হবে। তবে এখনো সেই অচলাবস্থা কাটেনি।
স্থগিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি প্রধান প্রকল্প : ঢাকা-টঙ্গী রেল রুটে তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন নির্মাণ এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর রুটে দ্বিতীয় লাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজও স্থগিত রয়েছে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল অতিরিক্ত দুটি লাইন নির্মাণের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের রেল যোগাযোগের সক্ষমতা বাড়ানো। ২০১২ সালে ৮৪৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা বাজেটে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৫ সালে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন জটিলতার কারণে ২০১৯ সালে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। বর্তমানে ৩০০ শতাংশ বাজেট বৃদ্ধি করে ৩৪৩২ কোটি টাকা করা হয়েছে এবং প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের ৩৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে, যা এখন আবার স্থগিত অবস্থায় রয়েছে।
ভারতীয় কর্মীদের অনুপস্থিতি : প্রকল্পের পরিচালক নাজনীন আরা কেয়া জানান, ‘নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ৫০ জনেরও বেশি ভারতীয় কর্মী গত ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ ছেড়ে গেছেন, ফলে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে প্রকল্পের বাস্তবায়নে আরো দেরি হচ্ছে।’ তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চিঠিও পাঠিয়েছেন বলে জানান।
ভারতের অর্থায়নে চলমান প্রকল্পের বিবরণ : ভারতের অর্থায়নে তিনটি ঋণচুক্তি (এলওসি) আওতায় বাংলাদেশে চলমান ৪২টি প্রকল্পের মধ্যে আটটি প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। ২০১০ সালে প্রথম এলওসি চুক্তি হয় ৮৬২ মিলিয়ন ডলারের, যার আওতায় ১৫টি প্রকল্প শুরু হয়। এরপর ২০১৬ সালে আরো ১২টি প্রকল্পের জন্য দুই বিলিয়ন ডলারের এলওসি চুক্তি হয়। ২০১৭ সালে আরো ১৫টি প্রকল্পের জন্য সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের তৃতীয় ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে, প্রথম দুটি ঋণচুক্তির আওতায় মাত্র ৬ শতাংশ খরচ হয়েছে। এলওসি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, প্রকল্পের উপকরণ এবং ঠিকাদার বা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলো ভারত থেকেই আনতে হবে।
‘দ্বিপাক্ষিক প্রকল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে’ : ভারতীয় কর্মীরা দেশ ত্যাগ করায় দ্বিপাক্ষিক প্রকল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। ভারতের গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে প্রকল্পগুলোর কাজ থমকে আছে। পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে ঢাকা এবং নয়াদিল্লির মধ্যে আলোচনা শুরু হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।