ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাজারে অস্থিরতা : খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে লাগামহীনভাবে

বাজারে অস্থিরতা : খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে লাগামহীনভাবে

গত দুই সপ্তাহ ধরে দেশের বাজারে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। সবজি, মাছ, মাংস, এমনকি ডিমের দামও একাধিকবার বেড়েছে। এই মূল্যবৃদ্ধির কারণে স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে উঠেছে। মাত্র এক মাস আগেও বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা ছিল, কিন্তু বর্তমানে সেই পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে গেছে। ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়ই মনে করছেন, বাজারে সিন্ডিকেটের কারণে এই অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, যা সরকারের নেয়া পদক্ষেপের সুফলকে ম্লান করে দিচ্ছে।

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার কারণে ঢাকার আশেপাশের কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, নেত্রকোণা, নরসিংদীসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় সবজির খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই কারণে কিছুটা সরবরাহ সংকট দেখা দিলেও তাতেও সবজির দাম দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে সবজির দাম বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। অথচ বন্যার সময়ও সবজির দাম এতটা চড়া ছিল না।

ক্রেতাদের মতে, সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক থাকলেও দাম বৃদ্ধি অস্বাভাবিক। যেমন, আজিজুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা জানান, বাজারে সরবরাহ ঠিক থাকলেও দাম বেড়েই চলেছে। তিনি বলেন, ‘এক মাস আগেও ৫০০ টাকার মুরগি কিনেছি, আজও কিনলাম, কিন্তু অন্য মুরগির দামে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। সরবরাহ ঠিক থাকলেও সিন্ডিকেটের কারণে দাম কমছে না।’

বাজারের সিন্ডিকেট ও মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে বাজারের এই অস্থিরতা দূর করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন ক্রেতারা। আজিজুল ইসলাম আরো মনে করেন, যদি উৎপাদনকারীরা সরাসরি বিক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রি করতে পারেন, তবে পণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে পারা যাবে। এই সময়ের বাজার ব্যবস্থাপনায় সিন্ডিকেট থাকলে কোনো স্থিতিশীলতা আসবে না বলেও মনে করেন তিনি।

অন্যদিকে, ঢাকায় দুই যুগ ধরে রিকশা চালিয়ে আসা কুদ্দুস নামের একজন দিনমজুর জানান, তার চারজনের পরিবারের খরচ এখন দ্বিগুণ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আগে যা খরচ হতো, এখন তার দ্বিগুণ ব্যয় হচ্ছে। সিন্ডিকেটের কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।’ তিনি মনে করেন, সরকারের উচিত কঠোর পদক্ষেপ নেয়া।

কারওয়ান বাজারের এক কাপড় বিক্রেতা রিয়াজুলের মতে, বাজারের খুচরা বিক্রেতারা দাম বাড়াচ্ছেন না, বরং পাইকারি পর্যায়ে যারা পণ্য বিক্রি করেন, তারাই দাম নিয়ন্ত্রণ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা কাপড়ের দাম বাড়াই না, কিন্তু পাইকাররা মাছ-মাংস, ডিম, সবজির দাম বাড়ান। তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’

মুরগি বিক্রেতা শাহীন জানান, তারা মুরগি খুব অল্প লাভে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতি কেজি বয়লার মুরগি ১৯৫ টাকায় কিনে মাত্র ৫ টাকা লাভে বিক্রি করি। এর চেয়ে কম দামে বিক্রি করা সম্ভব নয়।’

বাজারে ডিমের দাম নিয়েও ভোক্তারা বিপাকে পড়েছেন। কারওয়ান বাজারের ডিম বিক্রেতা মিলন জানান, সরকার ডিমের দাম নির্ধারণ করলেও বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘সরকার হালি প্রতি ৪৮ টাকা নির্ধারণ করলেও আমরা ৫৩ টাকায় কিনছি। তাহলে কিভাবে সেই দামে বিক্রি করব?’ তার মতে, ডিমের দাম কমার সম্ভাবনা নেই, বরং শীতের মৌসুমে ডিমের দাম আরো বাড়তে পারে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, শীতের সময় ডিমের দাম ১৮ টাকা পর্যন্ত হতে পারে, আর হাঁসের ডিমের দাম পৌঁছতে পারে ২৫ টাকায়।

বর্তমান বাজার পরিস্থিতি ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্যই উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরবরাহ ঠিক থাকলেও সিন্ডিকেট ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে। সরকার থেকে পদক্ষেপ নেয়া হলেও বাজারের অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে আসছে না। যদি এভাবে দাম বাড়তে থাকে, তবে সাধারণ মানুষের জন্য জীবনযাত্রা আরো কঠিন হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত