গাজীপুরে ১৬ দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ

প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

গাজীপুরে ১৬ দফা দাবি আদায়ে শ্রমিকদের বিক্ষোভ এবং সড়ক অবরোধের কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা-নবীনগর অংশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। আইরিশ ফেব্রিক্স লিমিটেড ও আইরিশ নিটওয়্যার লিমিটেডের শ্রমিকরা গতকাল শনিবার সকাল থেকে সড়কে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। তাদের দাবি, কারখানা কর্তৃপক্ষের দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো না মানায় তারা বাধ্য হয়ে সড়কে নামতে বাধ্য হয়েছেন। অবরোধের কারণে মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও সাধারণ পথচারীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

আন্দোলন শুরুর পর আশপাশের প্রায় ১৭টি কারখানায় বিশৃঙ্খলা এড়াতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ প্রশাসনের সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। তবে শ্রমিকরা তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

শ্রমিকদের ১৬ দফা দাবি গুলোর মধ্যে রয়েছে : ১. প্রশাসন বিভাগের জিএম হালিম হোসেন, উৎপাদন বিভাগের জিএম মাহাবুব আলম, আই ই ম্যানেজার জাকির হোসেন, এবং নিরাপত্তা প্রহরী গফুরকে অপসারণ। ২. শ্রমিকদের প্রতি কোনো ধরনের নির্যাতন বা অশ্লীল ভাষার ব্যবহার বন্ধ করা। ৩. জরুরি শিপমেন্টের জন্য শুক্রবার কাজ করলে ডাবল ওভারটাইম প্রদান। ৪. মাস শেষে বেতন প্রদানের পূর্বে যদি কোনো শ্রমিক জরুরি কাজে অনুপস্থিত থাকেন তবে তার বেতন আটকে রাখা যাবে না। ৫. শ্রমিকদের মোবাইল ফোন নিয়ে কারখানায় প্রবেশের অনুমতি প্রদান। ৬. ছুটি কাটালে হাজিরা বোনাস কাটা যাবে না। ৭. হাজিরা বোনাস সবার জন্য সমান করতে হবে। ৮. কারখানায় স্থানীয় স্টাফ রাখা যাবে না। ৯. সব সরকারি ছুটি যথাযথভাবে প্রদান করতে হবে। ১০. সার্ভিস বেনিফিট চালু করতে হবে। ১১. চাকরির বয়স এক বছর হলে একটি বেসিক বেতন প্রদান করতে হবে। ১২. নাইট শিফটের জন্য ১০০ টাকা এবং টিফিন বিল ৫০ টাকা দিতে হবে। ১৩. হাজিরা বোনাস ৮২৫ টাকা প্রদান করতে হবে। ১৪. শ্রমিক ছাঁটাই করলে ৬ মাস ১৩ দিনের বেতন দিতে হবে। ১৫. আন্দোলনের পর কোনো শ্রমিককে ছাঁটাই করা যাবে না। ১৬. বিশেষ কারণে এক ঘণ্টা দেরি হলে হাজিরা বোনাস কাটা যাবে না এবং প্রতিদিন ৫ মিনিট দেরি হলেও হাজিরা বোনাস কাটা যাবে না। এ ছাড়া পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ওভারটাইমের ব্যবস্থা করতে হবে।

শ্রমিকদের অভিযোগ ও দাবি : শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, কারখানার কর্তৃপক্ষ তাদের দাবি মেনে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তা মানা হয়নি। গত বৃহস্পতিবার কারখানা ছুটি দিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলন স্থগিতের প্রস্তাব দেয়া হয়। গত শুক্রবার (সাপ্তাহিক ছুটি) পার হয়ে গতকাল শনিবার সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিলে কর্তৃপক্ষ জানায় যে তাদের দাবি মানা হবে না। এতে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং তারা পুনরায় সড়ক অবরোধ শুরু করেন।

একজন নারী শ্রমিক বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো না মানায় আমরা বাধ্য হয়ে সড়ক অবরোধ করেছি। উৎপাদন সেকশনের জিএম মাহাবুব আলম শিপমেন্টের দোহাই দিয়ে সারা রাত আমাদের কাজ করান, কিন্তু টিফিন হিসেবে দেন মাত্র ১০ টাকা! দশ বছর ধরে কাজ করছি, কিন্তু সার্ভিস বেনিফিট পাই না। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’

শ্রমিকদের দাবি হলো, তাদের যথাযথ সুবিধা ও অধিকার নিশ্চিত করা হোক। তাদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের উপর বিভিন্নভাবে অন্যায় আচরণ করছে।

আন্দোলন ও এর প্রভাব : আন্দোলনের কারণে আশপাশের ১৭টি কারখানায় অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে। কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য সেসব কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। তবে আন্দোলনরত শ্রমিকদের মতে, তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা সড়ক থেকে সরবেন না।

আন্দোলনের ফলে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা-নবীনগর অংশে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের উভয়পাশে যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।

কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া : আইরিশ ফেব্রিক্স লিমিটেড এবং আইরিশ নিটওয়্যার লিমিটেডের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা শ্রমিকদের কিছু দাবিগুলো মেনে নিয়েছেন।

গাজীপুর শিল্পপুলিশ-২-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম জানান, ‘শ্রমিকরা সকাল থেকে ১৬ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে। এর মধ্যে কিছু দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছি।’

সেনাবাহিনীর তৎপরতা : শ্রমিকদের আন্দোলন সহিংস হয়ে উঠার শঙ্কায় ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত রাখার চেষ্টা করছেন। তবে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তাদের দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

শ্রমিকদের ১৬ দফা দাবি মেনে নেয়ার জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষকে চাপ দিতে এবং শ্রমিকদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।