ঘুরে দাঁড়ানোর অপেক্ষা

রাঙ্গুনিয়ার কর্ণফুলী জুট মিল : উৎপাদনে ধস

প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

রাঙ্গুনিয়ার কর্ণফুলী জুট মিল, যা বেসরকারি ইউনিটেক্স গ্রুপের কাছে লিজ দেয়ার পর আবার উৎপাদনে ফিরেছিল, এখন সংকটময় অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তিন শিফটে প্রায় ৮০০ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হওয়া এই মিলে দৈনিক ১৮ থেকে ৩০ টন সুতা উৎপাদিত হতো এবং তা বিশ্বের ১২টি দেশে রপ্তানি করা হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক বন্যা ও ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলনে জটিলতার কারণে মিলটির উৎপাদনে ধস নেমেছে। এর ফলে মিল থেকে এরই মধ্যে ৫০০ শ্রমিক বিদায় নিয়েছেন। এ অবস্থায় মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার গুজব উঠলেও ইউনিটেক্স গ্রুপের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা একে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা এই মিল শিগগিরই আবার ঘুরে দাঁড়াবে। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত কর্ণফুলী জুট মিল একসময় দেশের অন্যতম বৃহৎ পাটকলগুলোর মধ্যে একটি ছিল। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউনিটেক্স গ্রুপ ২০ বছরের জন্য এই মিলটি লিজ নেয়। ৪৭ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত এই মিলটি ইউনিটেক্স গ্রুপের অধীনে এসে দ্রুত উৎপাদন শুরু করে এবং প্রতিদিনের উৎপাদিত সুতা চীন, ইরান, তুরস্কসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হতো। শুধু সুতা নয়, কার্পেট এবং জুট ব্যাগসহ আরো বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনের পরিকল্পনাও ছিল ইউনিটেক্সের। সম্প্রতি সরকার পরিবর্তন এবং অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব কর্ণফুলী জুট মিলে পড়েছে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় মিলের পাঁচ শতাধিক শ্রমিক বিদায় নেন। তারা বেতন-বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ করেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীর সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করে মিল থেকে বিদায় করা হয়। বর্তমানে মিলটি সীমিত আকারে এক শিফটে চালু রয়েছে। ৭০ থেকে ৮০ জন শ্রমিক সেখানে কাজ করছেন। তবে, আগের তুলনায় উৎপাদন কমে গেছে। এক মাস আগেও মিলের স্পিনিং মেশিনের ২২টি ইউনিট চালু ছিল, এখন চলছে মাত্র ৬টি। অন্যান্য মেশিনের অবস্থাও একই রকম। এই সীমিত উৎপাদনে মিলটি টিকে থাকার চেষ্টা করছে, তবে আগামী এক মাসের মধ্যে যদি পরিস্থিতির উন্নতি না হয়, মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। মিলের সহকারী পরিচালক রায়হান আহমেদ জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকদের থেকে পাট সংগ্রহ করেই তারা উৎপাদন চালিয়ে আসছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক বন্যার কারণে কৃষকদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত পাট সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে কাঁচামালের সংকট দেখা দিয়েছে। এর পাশাপাশি ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ উত্তোলনে সমস্যার কারণে মিলের নগদ অর্থের অভাবও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরো জানান, গত জুলাই মাসে মিলের জন্য প্রায় ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা খরচ করে শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছিল।