কর-বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ে নতুন নির্দেশনা
সেবার ফি বৃদ্ধির পরিকল্পনা
প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকারের করবহির্ভূত রাজস্ব সংগ্রহের ক্ষেত্রে অনিয়ম প্রতিরোধ ও কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এর অংশ হিসেবে, কর আদায়ের দিনই সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের জারি করা নতুন পরিপত্র অনুযায়ী, সরকারি সেবার বিপরীতে অর্থ সংগ্রহের দিনই তা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। এটি কার্যকর হলে রাজস্ব ফাঁকি ও অনিয়মের হার কমানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পরিপত্রে আরো বলা হয়েছে, অফিস সময়ের পর বা সরকারি ছুটির দিনে আদায় করা অর্থ পরের কার্যদিবসে জমা করতে হবে। আদায় করা অর্থ সময়মতো জমা না দিলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে লিখিত ব্যাখ্যা চাইবে অর্থ মন্ত্রণালয়। যদি যৌক্তিক কারণ ছাড়া অর্থ জমা দিতে ব্যর্থ হয়, তবে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে সরকার নিশ্চিত করতে চায় যে, কর-বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও নিয়ম শৃঙ্খলা বজায় থাকবে।
সেবার ফি তিন বছর পরপর বাড়ানোর নির্দেশনা : নতুন পরিপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিভিন্ন সরকারি সেবা ও করের ফি তিন বছর পরপর পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। সেবার ফি ও কর বাড়ানোর নির্দেশনা মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য সরকারি সংস্থাগুলোকে দেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সেবার মাশুল দীর্ঘদিন ধরে অপরিবর্তিত থাকায় সরকারের রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ বলেছেন, দেশের অর্থনৈতিক আকার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সেবার ক্ষেত্রেও বৈচিত্র্য এসেছে। তাই প্রতি তিন বছর পরপর ফি হালনাগাদ করার পরিবর্তে প্রতি বছর সেগুলো হালনাগাদ করার চিন্তা করা যেতে পারে। এতে রাজস্ব বৃদ্ধি হবে এবং সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর কার্যক্রম আরো সহজ হবে।
কর-বহির্ভূত ও এনবিআরবহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা : চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকার এনবিআর বহির্ভূত কর থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা এবং করবহির্ভূত রাজস্ব থেকে ৪৬ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। অর্থ বিভাগের পরিপত্রে বলা হয়েছে, এনবিআর বহির্ভূত খাত দুটি থেকে রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা যথেষ্ট বেশি।
এ লক্ষ্যে যৌক্তিক ফি ও কর আরোপ এবং যথাযথ খাত চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে কর আদায়ের পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া, সরকারের প্রাপ্য সুদ ও লভ্যাংশ নিয়মিত আদায় এবং সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন, সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে এ নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। পরিপত্রে আরো বলা হয়েছে, রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও ফাঁকি প্রতিরোধ করা অত্যন্ত জরুরি, এবং নতুন এই নিয়মাবলী সেই লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে।
সেবার ফি ও মাশুল নির্ধারণে নজরদারি : অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অনেক সরকারি সংস্থা সেবা মাশুল বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে আসছে, কিন্তু তাদের স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। শুধুমাত্র ‘বহুদিন ফি বাড়ানো হয়নি’ এই যুক্তি দিয়ে সেবার ফি বাড়ানো উচিত নয়। সেবার ফি নির্ধারণের ক্ষেত্রে কস্টিংয়ের ওপর ভিত্তি করে তা নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে, অর্থ মন্ত্রণালয় সরকারি সেবার ফি বা সেবামূল্যের একটি তথ্যভান্ডার তৈরি করার উদ্যোগ নিচ্ছে। এটির মাধ্যমে বিভিন্ন খাতে সেবার মূল্য নির্ধারণ ও ফি আদায়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে এবং সঠিক নিয়ম মেনে রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে।
করবহির্ভূত ও এনবিআর বহির্ভূত রাজস্ব খাত : স্থানীয় সরকার ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন কর, ফি, জরিমানা এবং সেবা মাশুল করবহির্ভূত রাজস্ব হিসেবে গণ্য হবে। উদাহরণস্বরূপ, সরকারি জমি, খনি, প্রাকৃতিক সম্পদের ইজারা থেকে আদায়কৃত অর্থ, টোল, জরিমানা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত অর্থ করবহির্ভূত রাজস্ব হিসেবে সরকারি কোষাগারে জমা হবে। অন্যদিকে, এনবিআর বহির্ভূত করের মধ্যে ভূমি উন্নয়ন কর, মদ শুল্ক, সড়ক কর ও স্ট্যাম্প ডিউটি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বাজেটের ঘাটতি পূরণে রাজস্ব বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা : সরকারের বাজেট ব্যয়ের তুলনায় রাজস্ব সংগ্রহ বেশ কম হওয়ায় ঘাটতি পূরণের জন্য অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্তানুসারে রাজস্ব বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা আরো বেড়েছে। তাই কর-বহির্ভূত রাজস্ব এবং এনবিআর-বহির্ভূত কর আদায়ে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। সর্বশেষ নির্দেশনাগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হলে রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।