ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রাজধানীতে সবজির দামে অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি

রাজধানীতে সবজির দামে অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি

ঢাকার বিভিন্ন বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েই চলেছে। পেঁপে ছাড়া কোনো সবজি এখন ১০০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। শিম, টমেটো, বেগুনের দাম আকাশছোঁয়া। ফলে সাধারণ ক্রেতারা চরম বিপাকে পড়েছেন। বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, অনেকেই এক কেজি না কিনে অল্প পরিমাণে, ২৫০ বা ৫০০ গ্রাম করে সবজি কিনছেন। উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরসহ ঢাকার বিভিন্ন কাঁচাবাজারে ঘুরে দেখা গেছে, করলা, বেগুন, পটল, শসা, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙা, কচুর লতি, ঢ্যাঁড়সসহ শীতের আগাম সবজি যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, শিম, টমেটো, লাউ, গাজর এবং অন্যান্য শাকসবজির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। বাজারের বেশিরভাগ সবজির দাম ১০০ টাকার বেশি, কাঁচা পেঁপে ছাড়া যা ৪০-৪৫ টাকার মধ্যে রয়েছে। বিশেষত শিম, গাজর, বেগুন এবং ফুলকপির দাম সাধারণ মানুষের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি শিম ২৮০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, নতুন ফুলকপি আকারভেদে ১০০-১১০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে, এবং বেগুনের দাম ১৬০-১৯০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। পটল, ঝিঙা, চিচিঙ্গাসহ অন্যান্য সবজিও ১০০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকা কেজি দরে। এমন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে অনেক ক্রেতা এখন কম পরিমাণে কিনছেন, যা দৈনন্দিন জীবনযাপনে সমস্যা তৈরি করছে।

তবে কাঁচা মরিচের বাজারে কিছুটা স্বস্তি দেখা গেছে। সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় কাঁচা মরিচের দাম ১০০ টাকা কমে এখন ২৬০ টাকা কেজিতে নেমেছে। আগে এই দাম ছিল ৩৬০ টাকা। তবু অন্যান্য সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারের ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।

বিক্রেতাদের দাবি : বাজারে সবজির দাম বৃদ্ধি নিয়ে বিক্রেতারা বলছেন, চলমান বৃষ্টি ও উত্তরবঙ্গের বন্যার কারণে সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে, যার ফলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। উত্তরা কাঁচাবাজারের বিক্রেতা সাদ্দাম হোসেন জানান, ‘কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা কমেছে, কিন্তু অন্যান্য সবজির দাম চড়া। বৃষ্টি এবং বন্যার কারণে পণ্য সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে।’ আরেকজন বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় সব সবজির দামই এখন চড়া। ক্রেতারা তাই কেজির বদলে ৫০০ গ্রাম বা ২৫০ গ্রাম করে কিনছেন।’

ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়া : অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, এই মূল্যবৃদ্ধি তাদের দৈনন্দিন খরচের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। রাজধানীর এক ক্রেতা রুবিনা ইসলাম বলেন, ‘মাত্র দুই-তিনটি সবজি কিনতেই ৫০০ টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। বাকি বাজার করব কী ভাবে? এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের পক্ষে বাজার করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।’ তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের উচিত সরাসরি তদারকি ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া, যাতে বন্যা ও বৃষ্টির কারণে বাজারে এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি না ঘটে।’

মসলার বাজারেও দাম বৃদ্ধি : সবজির পাশাপাশি মসলার বাজারেও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। দেশি পেঁয়াজ এখন ১০৫-১১৫ টাকা, আমদানি করা পেঁয়াজ ৯৫-১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি রসুনের দাম ২১০-২২০ টাকা, আর আমদানি করা রসুনের দাম ২০০-২২০ টাকা। আদার বাজারেও দামের ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে, দেশি আদা ৪৫০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আর আমদানি করা আদার দাম ২৮০-৩০০ টাকা। শুকনো মরিচের দামও ৩৫০-৫০০ টাকার মধ্যে রয়েছে।

টিসিবির পর্যালোচনা : ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি সপ্তাহে পেঁয়াজ, তেল, এবং মসলার দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে ডাল এবং মুগ ডালের মতো কিছু পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। যদিও বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের জন্য কঠিন হয়ে উঠেছে।

ক্রেতাদের দাবি : বাজারে সবজির দামের এমন অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ে সাধারণ ক্রেতারা সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ ও কার্যকরী তদারকি দাবি করেছেন। তারা মনে করেন, বাজারে সরবরাহ বাড়াতে হলে সরকারকে আরো কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। সেই সঙ্গে বন্যা ও বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট সমস্যাগুলোর সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত