জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) সংস্কার আনার লক্ষ্যে গঠিত পাঁচ সদস্যের পরামর্শক কমিটি আগামী সপ্তাহ থেকে তাদের কার্যক্রম শুরু করতে পারে। এ কমিটি এনবিআরের রাজস্ব নীতি ও প্রশাসনে সংস্কার আনার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক আধুনিকায়ন এবং শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠার জন্য সুপারিশ প্রণয়ন করবে।
এটি মূলত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত কমিটি, যেখানে এনবিআরের সাবেক দুজন চেয়ারম্যান ও তিনজন সাবেক সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সাবেক দুই চেয়ারম্যান হলেন মোহাম্মদ আবদুল মজিদ ও ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ। আর তিনজন সদস্য হলেন মো. দেলোয়ার হোসেন, ফরিদ উদ্দিন ও আমিনুর রহমান।
এই পরামর্শক কমিটি মূলত এনবিআরের রাজস্ব নীতি সংস্কার, রাজস্ব প্রশাসন উন্নয়ন, এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা মূল্যায়ন ও আধুনিকায়ন নিয়ে কাজ করবে। এ ছাড়াও, তারা শুদ্ধাচার ও সুশাসনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এবং নীতিমালা প্রণয়ন, নাগরিক যোগাযোগ এবং অংশীজনদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা এবং রাজস্ব সংস্কার সংশ্লিষ্ট যে কোনো নীতিগত পরামর্শ ও সুপারিশ প্রদান করবে।
এনবিআরের সদস্য (বোর্ড প্রশাসন) এই কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন। তবে, প্রজ্ঞাপনে এ কমিটির কাজের সময়সীমা, কার কাছে প্রস্তাব জমা দিতে হবে, এবং এর আইনি কাঠামো সংক্রান্ত বিস্তারিত কোনো দিকনির্দেশনা দেয়া হয়নি। এ ছাড়া, কমিটির নেতৃত্ব কে দেবেন সেটিও উল্লেখ করা হয়নি। কমিটির এক সদস্য ইউএনবির সঙ্গে আলাপের সময় নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নেতৃত্ব ছাড়া কমিটির কার্যক্রম কীভাবে চলবে, সে বিষয়ে উদ্বেগ রয়েছে। সদস্য সচিব বৈঠক বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়ে কার সাথে যোগাযোগ করবেন তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, অন্য খাতে সংস্কারের জন্য গঠিত কমিটিগুলোর নিজস্ব অফিস ও কর্মচারী রয়েছে, কিন্তু এনবিআরের এই কমিটিতে কোনো নির্দিষ্ট স্থানের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ‘আমরা বৈঠক বা নিয়মিত কাজকর্ম করতে কোথায় বসব? ‘এই প্রশ্নও তোলেন তিনি।
এ ছাড়া, কমিটির মেয়াদ নিয়েও সুনির্দিষ্ট কিছু বলা হয়নি। ‘কমিটি তো চিরকাল ধরে চলতে পারে না,’ বলেন ওই সদস্য। তিনি উল্লেখ করেন, প্রতিটি কমিটিরই নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে, যা এই কমিটির ক্ষেত্রে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়নি। এই পরিস্থিতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সদস্যরা আশা করছেন যে সরকার খুব শিগগিরই একটি সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেবে। সদস্যদের মতে, কমিটির কার্যকরী ভূমিকা নিশ্চিত করতে মৌলিক বিষয়গুলোর সমাধান হওয়া প্রয়োজন। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই কমিটির কার্যক্রম দেশের রাজস্ব নীতিমালা ও প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে। তবে এর জন্য প্রয়োজনীয় সমন্বয় ও পরিষ্কার নির্দেশনা থাকা জরুরি। এনবিআরের এই সংস্কার উদ্যোগ আসে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে। ৫ আগস্ট, ছাত্রদের নেতৃত্বে হওয়া গণআন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকার উৎখাত হয়, এবং ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এরপর নতুন সরকার দেশের বিভিন্ন খাতে সংস্কার আনার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার একটি হলো এনবিআরকে সংস্কার করা।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এনবিআরের এক বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এনবিআরের কর্মকর্তাদের করদাতাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক কর আদায় না করে রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি কর আদায়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করার উপরও গুরুত্ব দিয়েছেন এবং কর আদায়ে কারসাজি না করার কথা বলেছেন।
সরকারের উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হচ্ছে রাজস্ব সংগ্রহের প্রক্রিয়াকে আরো দক্ষ ও কার্যকরী করা। তবে, যেহেতু এনবিআরের সংস্কার কমিটির কার্যক্রমে এখনো কিছু অস্পষ্টতা রয়ে গেছে, তাই কমিটির সফলতা অনেকাংশেই নির্ভর করছে সরকারের তরফ থেকে দেয়া সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনার উপর। এনবিআরের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সংস্কার আনা সরকারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হলেও, এই উদ্যোগটি সঠিকভাবে কার্যকর করা গেলে দেশের অর্থনীতিতে একটি বড় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।