ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

করমুক্ত সুবিধায় আবারো গ্রামীণ ব্যাংক

করমুক্ত সুবিধায় আবারো গ্রামীণ ব্যাংক

চার বছরের বিরতি শেষে নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূস প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক আবারো করমুক্ত সুবিধা পেয়েছে। ক্ষুদ্র ঋণ খাতে উদ্দীপনা সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার গ্রামীণ ব্যাংকের সব আয়কে করমুক্ত ঘোষণা করেছে, যা ২০২৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। অর্থনৈতিক খাতের এ সিদ্ধান্তটি নতুন করে ঘোষণা করা হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পক্ষ থেকে। এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপন গত বৃহস্পতিবার গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়, যেখানে বলা হয়েছে যে, আয়কর আইন, ২০২৩-এর ৭৬-এর উপ-ধারা (৫) এবং (৬)-এর আওতায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ঘোষণা অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং ২০২৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

আগের করমুক্তির ইতিহাস : গ্রামীণ ব্যাংক প্রথমবার করমুক্ত সুবিধা পায় ২০০০ সালে। এরপর থেকে ক্ষুদ্র ঋণ খাতে উন্নয়নের জন্য এ প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ২০০৬ থেকে ২০১০ এবং ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে এই সুবিধা অব্যাহত ছিল। সর্বশেষ ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এ সুবিধা পায় গ্রামীণ ব্যাংক। তবে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে করমুক্তির সুবিধা বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময়ে গ্রামীণ ব্যাংক নতুন করে কর অব্যাহতির আবেদন করলেও তা গ্রহণ করা হয়নি।

নতুন কর অব্যাহতির পেছনের কারণ : নতুন করে করমুক্ত সুবিধা দেয়ার পেছনে মূলত ক্ষুদ্র ঋণ খাতকে আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্য রয়েছে। ক্ষুদ্র ঋণ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। গ্রামীণ ব্যাংক সেই খাতের পুরোধা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। নোবেল বিজয়ী এই প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। ফলে ক্ষুদ্র ঋণ উৎসাহিত করতে সরকার আবারো কর অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পূর্বের অব্যাহতির আইনি ভিত্তি : ২০০০ ও ২০০১ সালে সরকার প্রথমবারের মতো ট্রাস্ট এবং লিগ্যাল অবলিগেশনের অধীনে পরিচালিত ক্ষুদ্র ঋণ আয়কে মোট আয়ে অন্তর্ভুক্ত করা থেকে অব্যাহতি দেয়। এরপর ২০০২ সালে অর্থ আইন দ্বারা ইনকাম ট্যাক্স অর্ডিন্যান্স ১৯৮৪-এর সেকশন ৪৪(১) এ সংযোজন করা হয়, যার ফলে নিবন্ধিত এনজিওগুলো ক্ষুদ্র ঋণ খাতের আয়ে কর অব্যাহতির সুবিধা পায়। এই ধারাবাহিকতায় ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংকও করমুক্ত সুবিধা উপভোগ করে। তবে ২০২১ সালে এসে এ সুবিধা বন্ধ হয়ে যায়। নতুন করে ৫ বছর ৩ মাসের জন্য করমুক্ত সুবিধা পেয়ে প্রতিষ্ঠানটি আবারো তাদের কার্যক্রমে অর্থনৈতিক সুবিধা পাবে।

ক্ষুদ্র ঋণ ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রভাব : গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকে ক্ষুদ্র ঋণ খাতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। বিশেষ করে গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী করতে ক্ষুদ্র ঋণের মডেলটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই মডেলটি শুধু বাংলাদেশেই নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও স্বীকৃতি পেয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্র ঋণের ক্ষেত্রে আদর্শ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র ঋণকে উৎসাহিত করার যে প্রচেষ্টা, তার মধ্যে কর অব্যাহতি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বিশেষত গ্রামীণ ব্যাংক যেহেতু এ খাতে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান, তাই তাদেরকে এ সুবিধা প্রদান ক্ষুদ্র ঋণ খাতের বিকাশে সহায়ক হবে।

আর্থিক খাতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব : গ্রামীণ ব্যাংককে পুনরায় করমুক্ত সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্ত ক্ষুদ্র ঋণ খাতকে আরো সম্প্রসারিত করার সুযোগ দেবে। এটি ব্যাংকের আর্থিক ভারসাম্য রক্ষায়ও সহায়ক হবে এবং প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করবে। এ সিদ্ধান্তের ফলে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্ষুদ্র ঋণ খাতের অবদান আরো সুদূরপ্রসারী হবে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ ধরনের করমুক্ত সুবিধা ক্ষুদ্র ঋণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। গ্রামীণ ব্যাংককে নতুন করে করমুক্ত সুবিধা দেয়ার ফলে ক্ষুদ্র ঋণ খাতের বিকাশ ও বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের পথে আরো একটি ধাপ অগ্রসর হবে। এটি দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত