উচ্চ সুদহার ও অর্থনৈতিক সংকট
শিল্প খাতের বিনিয়োগ পরিকল্পনা স্থবির
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের অন্যতম বড় রপ্তানিমুখী কোম্পানি শাশা ডেনিমস সম্প্রসারণের পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছে। কোম্পানিটি ঢাকার রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে ২১০টি লুমসহ একটি নতুন কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে আয় বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু দেশে ঋণের সুদহার দ্রুত বৃদ্ধির ফলে তারা এ পরিকল্পনা বাতিল করেছে।
শাশা ডেনিমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ জানান, কোম্পানি ৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছিল, যা থেকে তারা সরে এসেছে। কারণ ঋণের উপর উচ্চ সুদ দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। তিনি আরো জানান, বর্তমানে তারা প্রয়োজনীয় ১৬০ কোটি টাকার বিনিয়োগ করবে, যা অবশ্যম্ভাবী।
শাশা ডেনিমসের তিনটি ডাইং ইউনিটে বর্তমানে ১,৬০০ কর্মী কাজ করছে এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে কোম্পানির বার্ষিক আয় ছিল ৭৮৮ কোটি টাকা। সুদহার বৃদ্ধির কারণে বিনিয়োগ পরিকল্পনা বাতিল করা শুধু শাশা ডেনিমসের নয়, বরং বৃহৎ এবং ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারাও একই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
উচ্চ সুদের ফলে বিনিয়োগকারীরা ঋণ নিতে উৎসাহ হারাচ্ছেন, যার প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে। শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, কর্মসংস্থান তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়েছে, এবং উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সংকট আরো গভীর হচ্ছে। উচ্চ সুদের বোঝা শিল্প উৎপাদনের ওপর প্রভাব ফেলছে, এবং মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষের জীবনযাত্রা আরো কঠিন হয়ে উঠছে। দেশে মূল্যস্ফীতিও দুই অঙ্কের ঘরে রয়ে গেছে, যা অর্থনীতির ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে। মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতা, ডলারের বিনিময় হার, এবং জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের অর্থনীতি সংকটের মধ্যে পড়েছে।
২০২৩ সালে আইএমএফের চাপে নয়-ছয় সুদহার ব্যবস্থার বিলোপ ঘটে এবং সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়।
এরপর থেকে নীতি সুদহার একাধিকবার বাড়ানো হয়েছে, যার ফলে ব্যাংক ঋণের সুদহার ১৪ শতাংশে পৌঁছেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অনেক উদ্যোক্তা বিনিয়োগ পরিকল্পনা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন।
ব্যাংক ঋণের সুদহার দুই অঙ্কে পৌঁছে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের মুনাফা কঠিন হয়ে পড়েছে। শাশা ডেনিমসের এমডি শামস মাহমুদ বলেন, ‘ইন্টারেস্ট বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘কন্ট্রাক্টরি’। এতে ব্যবসায়িক বিনিয়োগ অসম্ভব হয়ে পড়ছে।’