ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এলসি নিচ্ছে না বিদেশি অনেক ব্যাংক

এলসি নিচ্ছে না বিদেশি অনেক ব্যাংক

অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে ২ মাস পার করলো দেশ। এই সময়ের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর নিরলস চেষ্টায় দেশের অর্থনীতি। যে কারণে দেশে আমদানি দায় ও বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ কমে এসেছে। দুই বছর আগের তুলনায় বেড়েছে ডলার প্রবাহও। এরপরও দেশের ব্যাংকগুলো বৈদেশিক বাণিজ্য নিয়ে স্বস্তিতে নেই। ঋণপত্র (এলসি) খুলতে বিড়ম্বনা রয়েই গেছে।

এর কারণ, বিদেশি ব্যাংকগুলো ঋণসীমা কমিয়েছে। একটি বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তার বক্তব্যে এমনটাই জানা গেল। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে আমদানির এলসি খোলা ১২ দশমিক ৯৬ শতাংশ কমে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪৩ দশমিক ৭১ শতাংশ কমেছে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি। আর আগস্ট পর্যন্ত প্রথম দুই মাসে আমদানির এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ১৩ শতাংশেরও বেশি। এলসি খুলতে বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে প্রশ্নে ব্যাখ্যা দেন এই ব্যাংক কর্মকর্তা। তিনি জানান, ‘কান্ট্রি রেটিং’ খারাপ হওয়া দেশের ব্যাংকগুলোকে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাংকগুলোর গ্যারান্টির প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের এলসির গ্যারান্টির বড় অংশই দেয় মধ্যপ্রাচ্যের ব্যাংকগুলো। ভারত ও ইউরোপ-আমেরিকার বৃহৎ ব্যাংকগুলোও কিছু এলসির গ্যারান্টর হয়। এ জন্য বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর জন্য একটি ঋণসীমা অনুমোদিত থাকে। তিনি বলেন, এমনিতেই বাংলাদেশের কান্ট্রি রেটিং খারাপ। এর ওপর দেশের কিছু ব্যাংকের পরিস্থিতি বেশ নাজুক। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে খারাপ বার্তা যাচ্ছে। যে কারণে বিদেশি ব্যাংকগুলো ঋণসীমা কমিয়ে দিয়েছে। তাই এলসি খুলতে বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে।

অর্থনৈতিক স্থবিরতার কারণে এমনিতেই আমদানির চাহিদা কম। যে চাহিদা আসছে, বিদেশি ব্যাংকগুলো ঋণসীমা কমিয়ে দেয়ার কারণে সে এলসিও খোলা যাচ্ছে না। তবে এক-দেড় বছর আগের তুলনায় বর্তমানে দেশের ব্যাংক খাতে ডলারের সরবরাহ বেশ ভালো বলে জানান তিনি। সম্প্রতি ১১টি বেসরকারি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোতে রয়েছে তারল্য সংকট। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে চলছে নানা নেতিবাচক প্রচারণা। জানা গেছে, এসব কারণেই বিদেশি অনেক ব্যাংক বাংলাদেশের কিছু ব্যাংকের এলসি নিচ্ছে না।

এমনকি আর্থিক সক্ষমতা বেশ ভালো ব্যাংকগুলোর জন্যও ঋণসীমা কমিয়ে দিয়েছে তারা। উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক মাশরেক ব্যাংক। মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী এ ব্যাংকটি বাংলাদেশের বেশিরভাগ ব্যাংকেরই এলসির গ্যারান্টর হয়। কিন্তু রাজনীতির পাশাপাশি ব্যাংক খাতের অস্থিরতার কারণে ব্যাংকটি বাংলাদেশের অনেক ব্যাংকেরই ঋণসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। আরেকটি ব্যাংক জার্মানির কমার্স ব্যাংকের। ইউরোপের ব্যাংকগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা রয়েছে এই ব্যাংকের। আর সেই ব্যাংকও বাংলাদেশের কিছু ব্যাংকের এলসি নিচ্ছে না। একই ভাবে ভারত, সিংগাপুর, সৌদি আরব, আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের আরো কিছু ব্যাংক ঋণসীমা কমিয়ে দিয়েছে বলে ব্যাংক নির্বাহীরা জানিয়েছেন। এদিকে আশার বাণী শুনিয়েছে ‘ব্যালান্স অব পেমেন্ট’ (বিওপি) শীর্ষক প্রতিবেদন। ব্যয়ের তুলনায় ডলার প্রবাহ বাড়ায় সরকারের চলতি হিসাব উদ্বৃত্তের ধারায় ফিরেছে বলা হয়েছে সেই প্রতিবেদনে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি করা বিওপির সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে দেশের আমদানি ব্যয় ছিল ১ হাজার ৩ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে এ ব্যয় ৯৯১ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। এক্ষেত্রে আমদানি ব্যয় কমেছে ১ দশমিক ২ শতাংশ। আমদানি কমলেও আগের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রপ্তানি আয়ে ২ দশমিক ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রপ্তানি আয় ছিল ৬৯৮ কোটি ডলার, চলতি অর্থবছরে তা বেড়ে ৭১৬ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় বেড়েছে ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে চলতি হিসাবে ৬১ কোটি ডলার ঘাটতি থাকলেও চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ১১ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত রয়েছে। চলতি অর্থবছরে দেশের আর্থিক হিসাবের (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) ঘাটতিও কমেছে। সব মিলিয়ে আগস্ট শেষে বিওপির ঘাটতি ছিল ১৩৯ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বিওপিতে ১৬৯ কোটি ডলার ঘাটতি ছিল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত