বাংলাদেশের জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থনৈতিক সতর্কবার্তা কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি, আর্থিক খাতের দুর্বলতা এবং তরুণ সমাজের জন্য সীমিত কর্মসংস্থান সুযোগগুলো বর্তমান পরিস্থিতির একটি উদ্বেগজনক চিত্র তৈরি করেছে। বিশ্বব্যাংক তাদের দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রকাশ করে এসব চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়। বিশ্বব্যাংক জানায়, দেশের আর্থিক ও অর্থনৈতিক শাসন ব্যবস্থায় জরুরি সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই প্রবৃদ্ধির পথে ফিরে আসা সম্ভব। তবে, এর জন্য সাহসী এবং সুসংগঠিত পরিকল্পনার প্রয়োজন, যা বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবিলা করে দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।
কর্মসংস্থানের সংকট এবং যুব সমাজের চ্যালেঞ্জ : বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক বলেন, ‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও, প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করলেও তাদের জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়নি। বিশেষ করে, শিক্ষিত তরুণ ও নারীরা চাকরি খুঁজে পেতে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন।’ প্রতিবেদন অনুসারে, শহুরে শিক্ষিত তরুণরা বেকারত্বের মুখোমুখি হচ্ছে, যেখানে তৈরি পোশাক খাতসহ বৃহৎ শিল্পগুলোতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।
২০১৬ সাল থেকে ঢাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পেলেও চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগে উল্লেখযোগ্য হারে চাকরির সুযোগ হ্রাস পেয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয় যে, সামগ্রিক বেকারত্বের হার ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কমলেও তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের প্রাপ্যতা এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। বিশেষ করে শহুরে তরুণ সমাজ, যারা শিক্ষা সম্পন্ন করেও তাদের প্রত্যাশিত চাকরি পাচ্ছেন না।
মুদ্রাস্ফীতি এবং মূল্যস্ফীতির চাপ : উচ্চ খাদ্য ও জ্বালানি মূল্যের কারণে মুদ্রাস্ফীতি একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। ২০২৪ অর্থবছরে গড় মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৭ শতাংশ, যা জুলাই মাসে আরো বেড়েছে এবং অগাস্টে সামান্য পরিমিত হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মুদ্রাস্ফীতি নিকট মেয়াদে আরো বেশি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে সরবরাহ-দিকের সমস্যাগুলো সমাধান হলে এটি মাঝারি সময়ে ধীরে ধীরে কমবে। বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ধ্রুব শর্মা বলেন, ‘বৈশ্বিক পরিস্থিতি উন্নত হলে এবং বিনিময় হারের নমনীয়তা বাড়ালে আগামী অর্থবছরগুলোতে বিদেশি খাতের ওপর চাপ কমতে পারে।’ এ ছাড়াও, ২০২৪ সালের মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি ক্রলিং পেগ বিনিময় হার সিস্টেম বাস্তবায়ন করেছে, যা আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক বিনিময় হারের ব্যবধান কমাতে সহায়ক হবে।