আয়োডিন অভাবজনিত সমস্যা একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা। এ সমস্যা নিরসনকল্পে এবং জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে গতকাল ২১ অক্টোবর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশ্ব আয়োডিন দিবস উদযাপিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে গতকাল বিশ্ব আয়োডিন দিবস উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) কর্তৃক আয়োজিত উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল (NI) ও গ্লোবাল এলায়েন্স ফর ইম্প্রুভড নিউট্রিশন (GAIN)-এর সহায়তায় ‘বিশ্ব আয়োডিন দিবস-২০২৪’ উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভা বিসিক ভবন, তেজগাঁও, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। আয়োডিন দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিসিক চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দীন আহাম্মদ খান।
বিসিকের পরিচালক (শিল্প উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ) মো. আহসান কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিসিকের পরিচালক (অর্থ) মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস, পরিচালক (প্রশাসন) শ্যামলী নবী, পরিচালক (দক্ষতা ও প্রযুক্তি) কাজী মাহাবুবুর রশিদ, পরিচালক (প্রকৌশল ও প্রকল্প বাস্তবায়ন) মো. আব্দুল মতিন, পরিচালক (বিপণন, নকশা ও কারুশিল্প), খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান, এনআই এর কান্ট্রি ডিরেক্টর সায়কা সিরাজ ও গেইনের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. রুদাবা খন্দকার।
আলোচনা অনুষ্ঠানে আয়োডিনের গুরুত্বের উপর উপস্থাপনা করেন প্রফেসর সৈয়দা আফরোজ জাহান মৌসুমী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সরোয়ার হোসেন, লবণ সেল প্রধান, বিসিক। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিসিকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ, লবণ মিল মালিকগণ, লবণ ব্যবসায়ী, ভোক্তা, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন তারানা জাহান তানিয়া, উপব্যবস্থাপক (উপকরণ), বিসিক এবং শেখ আলী আশরাফ ফারুক, নকশাবিদ, বিসিক। আয়োডিন একটি অত্যাবশ্যকীয় অনুপুষ্টি। আয়োডিন মানুষের স্বাভাবিক, মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। দেশে অনুপুষ্টির অভাবজনিত সমস্যাগুলোর মধ্যে আয়োডিন ঘাটতিজনিত সমস্যা অন্যতম। আয়োডিনের অভাবে গলগ-, হাবাগোবা, বামনত্ব, অকাল গর্ভপাত, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধিত্বসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
’৯০ দশকের আগে বাংলাদেশে আয়োডিন ঘাটতিজনিত সমস্যাগুলো প্রকট আকার ধারণ করেছিল। আয়োডিনের ঘাটতিজনিত সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার ১৯৯০ সাল হতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতায় বিসিকের মাধ্যমে সর্বজনীন আয়োডিনযুক্ত লবণ উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
কার্যক্রমের অংশ হিসেবে লবণ মিলের নিবন্ধন প্রদান, মিলসমূহকে পটাশিয়াম আয়োডেট সরবরাহ, আয়োডিনযুক্ত লবণের মান নিয়ন্ত্রণ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান, লবণমিল ও বাজার পর্যায়ে মনিটরিং এবং আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয়। এ কার্যক্রমের ফলে বর্তমানে ৭৬ শতাংশ পরিবার আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার করছে। বর্তমানে দৃশ্যমান গলগ- নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে। দেশে আয়োডিনযুক্ত লবণ উৎপাদন কার্যক্রমের শুরুর দিকে অর্থাৎ ১৯৯৩ সালে আয়োডিনের অভাবজনিত সমস্যার হার ছিল ৬৮.৯০ শতাংশ।
বিসিকের এ কার্যক্রমের ফলে ২০১৯-২০ পর্যন্ত আয়োডিনের অভাবজনিত সমস্যার হার কমে দাড়িয়েছে ২৪.৬ শতাংশ । বর্তমানে আয়োডিনের অভাবজনিত সমস্যার হার আরও কমে গেছে। কোনো দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ পরিমিত মাত্রায় আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার করলে সে দেশ আন্তর্জাতিকভাবে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। সে স্বীকৃতি পেতে আমাদের আর বেশি দেরি নেই। আর মাত্র ১৪ শতাংশ মানুষকে পরিমিত মাত্রায় আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারের আওতায় নিয়ে আসতে পারলেই আমরাও সে স্বীকৃতি অর্জন করব। সে উদ্দেশ্যেই এই আলোচনা সভা। দেশের মানুষকে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারের আওতায় নিয়ে আসতে সচেতনতা আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। আয়োডিন সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে বিশ্বব্যাপী ২১ অক্টোবর দিবসটি উদযাপিত হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে বাংলাদেশেও এবছর আয়োডিন দিবসের গুরুত্বের উপর আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।