উচ্চমূল্যের বাজারে চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চালের আমদানিতে শুল্ক-কর কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে আমদানি শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক এবং আগাম কর হ্রাস করে গত রোববার সন্ধ্যায় প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, চালের ওপর বিদ্যমান ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। একইসঙ্গে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া, চাল আমদানিতে যে ৫ শতাংশ আগাম কর ছিল, তা পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এনবিআর জানিয়েছে, শুল্ক ও করের এই পরিবর্তনের ফলে আমদানি পর্যায়ে চালের ব্যয় কমবে। এর প্রভাব হিসেবে চালের আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি কেজিতে খরচ ১৪ টাকা ৪০ পয়সা কমে আসবে। এনবিআর আশা করছে, এই শুল্ক-কর হ্রাসের ফলে বাজারে চালের সরবরাহ বাড়বে, যার মাধ্যমে দেশের সাধারণ জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে এবং চালের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে।
গত দুই মাস ধরে চালের বাজারে উচ্চমূল্য বিরাজ করছে। বিভিন্ন ধরনের চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে গত এক মাসে। এই পরিস্থিতিতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এনবিআরকে শুল্ক কমানোর প্রস্তাব দেয়া হয়। সেপ্টেম্বরে মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে শুল্ক কমিয়ে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির সুযোগ বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বোরো মৌসুমে ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ৫ লাখ টন ধান এবং ১৪ লাখ ৭০ হাজার টন চাল সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এই লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৯৭০ টন ধান এবং ১২ লাখ ৫৫ হাজার ৪৯৭ টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। বর্তমানে সরকারি গুদামে ১২ লাখ ৬৪ হাজার ৭৪০ টন চাল এবং ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৯২৮ টন গমসহ মোট ১৭ লাখ ৫৪ হাজার ১৯৯ টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ১৪টি জেলায় ভয়াবহ বন্যার কারণে আউশ, রোপা আমন এবং আমন বীজতলা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে চালের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে এবং বাজারে চালের দাম আরো বেড়ে যেতে পারে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
এ পরিস্থিতি মোকাবিলায়, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ বিদ্যমান শুল্ক-কর হার (যার মধ্যে রয়েছে ২৫ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি, ২৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর, ৫ শতাংশ অগ্রিম কর, ১ শতাংশ ইন্স্যুরেন্স, ১ শতাংশ ল্যান্ডিং চার্জ এবং ০.৫ শতাংশ ডিএফ ভ্যাট) থেকে কমিয়ে শুধুমাত্র ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক রাখার প্রস্তাব করা হয়েছিল। এনবিআর ইতোমধ্যে ভোজ্যতেল, চিনি ও ডিম আমদানির ক্ষেত্রেও শুল্ক ছাড় দিয়ে বাজারে সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা করেছে।
এবার চালের ক্ষেত্রে একই ধরনের শুল্ক হ্রাসের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যা চালের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই শুল্ক হ্রাসের ফলে বেসরকারি আমদানিকারকরা বেশি পরিমাণ চাল আমদানি করতে পারবে, যার মাধ্যমে দেশের খাদ্য সরবরাহে স্থিতিশীলতা আসবে এবং সাধারণ মানুষকে সহনীয় দামে চাল ক্রয় করতে সহায়তা করবে।