কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রেপো সুবিধা সীমিত
সপ্তাহে একদিন নিলামের নতুন সিদ্ধান্ত
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের তারল্য পরিস্থিতি বিবেচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেপো সুবিধার সময়সূচিতে নতুন পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। আগামী নভেম্বর থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সপ্তাহে মাত্র একদিন রেপো নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমানে এই নিলাম প্রতি সপ্তাহে দুই দিন করা হয়ে থাকে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরো কৌশলগতভাবে খোলাবাজার কার্যক্রম বা ওপেন মার্কেট অপারেশনসকে (ওএমও) নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। মূলত ব্যাংকগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা কমানো এবং তাদের নিজস্ব তারল্য ব্যবস্থাপনা আরো স্বাবলম্বী করে তোলাই এর উদ্দেশ্য বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রেপো নিলামের নতুন সময়সূচি : বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গত সোমবার দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে জানানো হয়, প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার ৭, ১৪ ও ২৮ দিনের মেয়াদি রেপো নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। যদি কোনো কারণে মঙ্গলবার সরকারি ছুটি থাকে, তাহলে নিলামটি পরবর্তী কর্মদিবসে অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া, নগদ জমা সংরক্ষণ (সিআরআর) এবং রিজার্ভ মেইনটেন্যান্স পিরিয়ডের (আরএমপি) সুবিধার্থে ওভারনাইট বা এক দিনের রেপো নিলাম আগের মতোই চালু থাকবে।
বিদ্যমান সুবিধা অব্যাহত থাকবে : এবারের নতুন পরিবর্তনে দৈনিক ভিত্তিতে প্রচলিত নীতি সুদহার করিডরের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) এবং নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) সুবিধাও অব্যাহত থাকবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, বিদ্যমান মুদ্রানীতি কাঠামো অনুযায়ী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য পরিচালিত ওপেন মার্কেট অপারেশনসকে আরো কার্যকর করতে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতদিন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দৈনিক রেপো সুবিধা পেত। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির শর্তানুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক দৈনিক রেপো সুবিধা বন্ধ করে দেয়। এর পর গত ১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঘোষণা করা হয় যে, সোম ও বুধবার রেপো নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। এবার সেই দুই দিনের সময়সূচি পরিবর্তন করে সপ্তাহে একদিন করা হলো।
তারল্য পরিস্থিতি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ : বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পদক্ষেপ ব্যাংকিং খাতের তারল্য পরিস্থিতির প্রতিফলন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। যদিও কিছু ব্যাংকে তারল্য ঘাটতি রয়েছে, তবে সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতে তারল্যের তেমন কোনো সংকট নেই। বেসরকারি গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নূরুল আমিন বলেন, ‘বর্তমানে ব্যাংক খাতে যথেষ্ট তারল্য রয়েছে। কিছু ব্যাংকের তারল্য ঘাটতি থাকলেও সার্বিকভাবে খাতে কোনো বড় ধরনের সমস্যা নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকনির্ভরতা কমানো ভালো পদক্ষেপ হবে।’ তিনি আরো উল্লেখ করেন, ‘বাজারকে নিজস্ব গতিতে চলতে দেয়া উচিত। আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজার যদি আরো সক্রিয় হয়, তাহলে ব্যাংকগুলো সহজে সেখান থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে। রেপো নিলাম সপ্তাহে একদিন হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে, এবং ব্যাংকগুলোর জন্য এটি দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক হতে পারে।’
তারল্য সমস্যা সমাধানে নতুন সম্ভাবনা : বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মুদ্রার তারল্য নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতার লক্ষ্য নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করে চলেছে।
তারল্য ব্যবস্থাপনা জোরদার করতে এবং ব্যাংকগুলোর নিজের মধ্যে লেনদেন ও তারল্য ব্যবস্থাপনায় স্বাবলম্বী হওয়ার লক্ষ্যে এই নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এখন দেখার বিষয়, রেপো নিলাম সপ্তাহে একদিনে সীমিত হওয়ায় ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট এড়াতে এবং অর্থনীতিতে কিভাবে এটি প্রভাব ফেলবে।