যুদ্ধের শঙ্কা ও মার্কিন নির্বাচনের ছায়া

এবারের বিশ্বব্যাংক আইএমএফ বৈঠক

প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

চলতি সপ্তাহে ওয়াশিংটনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধানেরা একত্র হচ্ছেন। এমন এক সময় বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের এই যৌথ বৈঠক হচ্ছে, যখন মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের শঙ্কা তুঙ্গে, ইউরোপে যুদ্ধ চলমান। সেই সঙ্গে আছে চীনের অর্থনৈতিক ধীরগতি। সবচেয়ে বড় বিষয় মার্কিন নির্বাচন। ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার নির্বাচিত হলে বাণিজ্যবিরোধ বৃদ্ধি ও বহুপক্ষীয় বন্দোবস্ত ক্ষুণ্ণ হওয়ার শঙ্কা আছে। খবর রয়টার্স আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক বৈঠকে ১০ হাজারের বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছেন। বিভিন্ন দেশের অর্থমন্ত্রী, অর্থ মন্ত্রণালয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা সেখানে থাকবেন। বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পালে হাওয়া লাগানো, ঋণসংকট মোকাবিলা ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানির অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা হবে এই যৌথ বৈঠকে। বিশ্বের অর্থনৈতিক নেতারা বৈঠকে অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা করবেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আগামী ৫ নভেম্বর মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল সবকিছু ছাপিয়ে যেতে পারে। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হলে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ার শঙ্কা আছে। বিষয়টি হলো, আগেরবারের মতো এবারো ট্রাম্প বিপুল হারে শুল্ক আরোপ করবেন। সেই সঙ্গে তার যে নির্বাচনি অঙ্গীকার, তা বাস্তবায়িত হলে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ আরো বাড়বে। জলবায়ু সহযোগিতা থেকে সরে আসবে যুক্তরাষ্ট্র। এই বাস্তবতায় মার্কিন নির্বাচন এখন বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন আটলান্টিক কাউন্সিলের ভূ-অর্থনীতি কেন্দ্রের প্রধান জশ লিপস্কি। বিষয়টি আনুষ্ঠানিক এজেন্ডায় না থাকলেও এটা এখন সবার মূল ভাবনা। তিনি একসময় আইএমএফে কাজ করতেন। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতি ও ডলারের ভবিষ্যৎ; সেই সঙ্গে পরবর্তী ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান কে হবেন, সেটাও। বাস্তবতা হলো, বিশ্বের প্রতিটি দেশে এসবের প্রভাব পড়বে। ধারণা করা হচ্ছে, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস নির্বাচনে জয়ী হলে জলবায়ু, কর ও ঋণসহায়তার ক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন। বাইডেন প্রশাসন ট্রাম্প প্রশাসনের মতো চীনবিরোধী অবস্থান বজায় রেখেছে। চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, সেমিকন্ডাক্টর ও সৌর প্যানেলে শুল্ক বৃদ্ধি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে। সেই সঙ্গে ধনী দেশগুলোর শিল্পনীতি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হবে। আইএমএফ গতকাল মঙ্গলবার বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হালনাগাদ পূর্বাভাস দেবে। আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা গত সপ্তাহে ইঙ্গিত দেন, উচ্চ ঋণে জর্জরিত বিশ্ব অর্থনীতি মধ্য মেয়াদে নিম্ন প্রবৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে সামনে অপেক্ষা করছে ‘কঠিন ভবিষ্যৎ’। জর্জিয়েভা আরো বলেন, প্রবৃদ্ধি নিয়ে তিনি বেশি হতাশ নন, কারণ অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে। এতে চীন ও ইউরোপের অব্যাহত দুর্বলতা কিছুটা হলেও ভারসাম্যের মধ্যে আনা যাচ্ছে। দরিদ্র দেশগুলোর ঋণ খেলাপ করার প্রবণতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে তারল্যের সংকট নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হবে। এ পরিস্থিতিতে বিদেশি সহায়তা কমার ফলে উদীয়মান দেশগুলোর উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।