ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাজারে চাল, তেল, চিনি ও পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত

বাজারে চাল, তেল, চিনি ও পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত

বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে চাল, তেল, চিনি ও পেঁয়াজের মতো অতি প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর। সরকারের পক্ষ থেকে শুল্ককর কমানোর ঘোষণা দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত বাজারে এর কোনো ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়নি। এর মধ্যে শুধুমাত্র ডিমের দাম কিছুটা কমেছে, কিন্তু অন্যান্য পণ্য কিনতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।

চালের মূল্যবৃদ্ধি, নিম্ন আয়ের মানুষের প্রধান উদ্বেগ : দেশে চালের মূল্যবৃদ্ধি বেশ কয়েক বছর ধরেই সাধারণ মানুষের জন্য একটি বড় সমস্যা। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ যারা প্রতিদিনের খাবারের জন্য ভরসা রাখে মূলত চালের ওপর, তারা এই মূল্যবৃদ্ধির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ঢাকার কারওয়ান বাজার ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় মাঝারি মানের ব্রি-২৮ চালের দাম কেজি প্রতি ১ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে। ব্রি-২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৬১-৬২ টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫৮-৫৯ টাকা। অন্যদিকে, সরু চালের দামও কিছুটা বেড়েছে। মিনিকেট ও নাজিরশাইলের দাম কেজিতে ১-২ টাকা বেড়েছে, যেখানে ভালো মানের নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। চালের বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ধানের সরবরাহ কম থাকায় মিল মালিকেরা চালের দাম বাড়িয়েছেন। অন্যদিকে, অসময়ের অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে আমন ধানের উৎপাদনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা আগামিতে চালের মূল্য আরো বাড়ানোর শঙ্কা তৈরি করছে। যদিও সরকার চাল আমদানির শুল্ক কমিয়েছে, তবে এখনো চাল আমদানি শুরু হয়নি। ফলে বাজারে এই শুল্কছাড়ের কোনো প্রভাব পড়েনি। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, চাল আমদানির পাশাপাশি সরবরাহ ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করতে হবে, যাতে মিল মালিকেরা সুযোগ নিয়ে দাম বাড়াতে না পারেন।

তেল ও চিনির মূল্যবৃদ্ধি, শুল্কছাড়েও কমেনি দাম : ভোজ্যতেল ও চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার শুল্ককর কমানোর ঘোষণা দিলেও এর কোনো সুফল এখনো বাজারে দেখা যায়নি। গত এক সপ্তাহে চিনির দাম কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে। খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা কেজি দরে। যদিও এনবিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, শুল্ক–কর কমানোর ফলে চিনির আমদানি খরচ কমে কেজিতে ১১ টাকা কমতে পারে। তবে ব্যবসায়ীদের মতে, শুল্কছাড়ের চিনি এখনো বাজারে আসেনি, তাই মূল্য হ্রাসের কোনো প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি। সরকার তেলের দাম না বাড়ানোর জন্য শুল্ক কমিয়েছে, কিন্তু এক সপ্তাহে খোলা সয়াবিন তেল ও পাম তেলের দাম লিটারে ১ থেকে ২ টাকা বেড়েছে। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫৩-১৫৬ টাকা প্রতি লিটার, এবং পাম তেল ১৪৮-১৫১ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। বোতলজাত তেলের দাম না বাড়লেও খোলা তেলের মূল্যবৃদ্ধি ভোক্তাদের ওপর বড় ধরনের চাপ ফেলছে।

পেঁয়াজের দামে ঊর্ধ্বগতি : দেশীয় পেঁয়াজের দামেও ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে, এবং বর্তমানে দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা কেজি দরে। আমদানি করা পেঁয়াজ কিছুটা কম দামে বিক্রি হলেও, সেটিও কেজি প্রতি ১১০-১১৫ টাকার মধ্যে রয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ভারতের থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দামও বেড়ে যাওয়ায় দেশীয় পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। অন্যদিকে, বন্যা ও অসময়ের বৃষ্টির কারণে দেশীয় মুড়িকাটা পেঁয়াজের উৎপাদনও বিলম্বিত হয়েছে, যার ফলে সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে।

ডিমের দাম কমলেও অন্যান্য পণ্যে স্বস্তি নেই : দেশে ডিমের দাম কিছুটা কমেছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তির খবর। শুল্কছাড়ে ভারত থেকে আমদানি করা ডিম বাজারে আসতে শুরু করেছে, যার ফলে ডিমের দাম কমে গেছে। বর্তমানে খুচরা বাজারে ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন ১৪৫-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা কয়েক দিন আগেও ১৮০ টাকা ছিল। তবে ডিমের দাম কমলেও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জন্য তেমন কোনো স্বস্তি আনতে পারেনি।

মূল্যবৃদ্ধির পেছনের কারণ এবং ভবিষ্যৎ সংকট : অতি বৃষ্টি ও বন্যার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন এবং সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটেছে, যা মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। বিশেষ করে চাল, পেঁয়াজ ও সবজির ক্ষেত্রে এই প্রভাব বেশি দেখা যাচ্ছে। সরকার আমদানি শুল্ক কমানোর পাশাপাশি বাজারে নজরদারি চালাচ্ছে, কিন্তু সাধারণ মানুষের মতে, এসব পদক্ষেপের প্রভাব এখনো বাজারে তেমনভাবে পড়েনি। অনেকেই মনে করছেন, সরকারের আরো কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন, যাতে বাজারে সরবরাহ ঠিক থাকে এবং ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিয়ে দাম বাড়াতে না পারেন। মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা সালমা আলম বলেন, বন্যার কারণে কিছু পণ্যের দাম বাড়তে পারে, এটা আমরা বুঝি। কিন্তু দাম এতটা বাড়ার পেছনে কি শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ দায়ী? সরকারের নানা উদ্যোগ থাকলেও বাজারে গিয়ে আমরা তার সুফল পাচ্ছি না। সরকার যদিও শুল্কছাড় দিয়ে মূল্যবৃদ্ধি রোধ করার চেষ্টা করছে, তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধুমাত্র শুল্কছাড়ই যথেষ্ট নয়। পণ্যের সরবরাহ বাড়ানো এবং বাজারে শক্তিশালী নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি, যাতে অপ্রয়োজনীয় মজুদ বা দাম বাড়ানোর প্রবণতা বন্ধ করা যায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত