রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিনিয়োগে স্থবিরতার মধ্যেও চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে পণ্য আমদানির ঋণপত্র (এলসি) নিষ্পত্তি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের সেপ্টেম্বরে এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে ছিল ৪ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে এ বছর সেপ্টেম্বরে বেড়েছে প্রায় ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার।
আগের মাসগুলোর ওভারডিউ পেমেন্টের চাপ : ব্যবসায়িক ও ব্যাংকিং কার্যক্রমের ধীরগতির কারণে প্রথম দুই মাসে এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণ কম থাকলেও সেপ্টেম্বরে নিষ্পত্তির হার বাড়ার পেছনে রয়েছে পূর্ববর্তী মাসগুলোর ওভারডিউ পেমেন্ট। পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, ‘জুলাই মাসে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকা এবং অন্যান্য কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটায় অনেক এলসি পেমেন্ট স্থগিত ছিল। এর পাশাপাশি আগস্টের কিছুদিনের অস্থিরতার কারণে ব্যবসায়ীরা পেমেন্ট করতে পারেননি। সেপ্টেম্বরে সেই ওভারডিউ পেমেন্টগুলো নিষ্পত্তি করতে হয়েছে, যা নিষ্পত্তির সংখ্যা বাড়িয়েছে।’
চলতি অর্থবছরের এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির সামগ্রিক চিত্র : বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রথম তিন মাসে আমদানি নিষ্পত্তি করা হয়েছে মোট ১৬ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময় ছিল ১৬ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। এ সময় এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ১৫ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৬ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমদানি নির্ভর দেশ হিসেবে বাংলাদেশে প্রতি মাসে ৫ থেকে ৬ বিলিয়ন ডলারের আমদানি প্রয়োজন। অর্থনীতির আকার ও সম্প্রসারণের জন্য আমদানি এলসি খোলা বৃদ্ধি পাওয়াটা ইতিবাচক। তবে বিভিন্ন কারণে এলসি খোলার পরিমাণ এখনো স্থিতিশীল হয়নি।’
সরকারি আমদানির বকেয়া পরিশোধের চাপ হ্রাস : এলসি নিষ্পত্তির হার বাড়ার পাশাপাশি সরকারি আমদানির বকেয়া পরিশোধেও ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। একটি বেসরকারি ব্যাংকের ডেপুটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, ‘নতুন গভর্নর দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে সরকারি এলসির প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ নেয়া হয়, যা এখন প্রায় ১ বিলিয়নের নিচে নেমে এসেছে।’ ফলে ডলারের উপর চাপ কমে আসছে এবং সামনের মাসগুলোতে পরিস্থিতি আরো উন্নত হবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
এলসি খোলা ও অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা : বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, গত সেপ্টেম্বরে এলসি খোলা হয়েছে মোট ৫ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলারের। গত বছরের একই সময়ে এ পরিমাণ ছিল ৫ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ এ বছর সেপ্টেম্বরে এলসি খোলা বেড়েছে ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। তবে অক্টোবর মাসে এলসি খোলার চাপ তুলনামূলকভাবে কম বলে জানিয়েছেন ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনো সম্পূর্ণ স্থিতিশীল না হওয়ায় এবং বিনিয়োগকারীদের অনিশ্চয়তার কারণে ব্যবসায়ীরা নতুন আমদানিতে আগ্রহী হচ্ছেন না।
রেমিটেন্সের ডলার কেনার মূল্য : দেশের ব্যাংকগুলো বর্তমানে রেমিটেন্সের ডলার কেনায় ১২০ থেকে ১২১ টাকা দিচ্ছে। আর আমদানি এলসি নিষ্পত্তিতে ডলারের দর পড়ছে ১২১ থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা। ডলারের চাহিদা ও সরবরাহের উপর ভিত্তি করে এই মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে, যা আমদানিকারকদের সামগ্রিক খরচে প্রভাব ফেলছে। এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি উভয়ের বৃদ্ধির বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের আমদানি কার্যক্রমের উপর চাপ কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মতামত অনুসারে, নতুন গভর্নরের নীতিমালায় সরকারি এলসির বকেয়া পরিশোধে গতি আসায় সামনের দিনগুলোতে ডলারের মূল্য স্থিতিশীল থাকবে এবং আমদানি আরো বাড়বে, যা অর্থনীতির জন্য সহায়ক হবে।