জ্বালানি তেল ও এলএনজি আমদানির নীতিগত অনুমোদন

প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে ৩২ লাখ মেট্রিক টন পরিশোধিত ও অপরিশোধিত তেল এবং চলতি বছরের নভেম্বর মাসের জন্য এক কার্গো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এক কমিটির বৈঠকে এ লক্ষ্যে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। সূত্র জানায়, দেশের চাহিদা মেটাতে পরিশোধিত জ্বালানি তেল সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে আমদানি করার প্রস্তাব নীতিগতভাবে অনুমোদন পেয়েছে। এই জ্বালানি আমদানি হবে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের তহবিল থেকে। ২০২৫ সালে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বিক্রয় প্রবণতা ও পর্যাপ্ত মজুত বিবেচনায় পরিশোধিত জ্বালানি তেলের আমদানি পরিকল্পনা করেছে। জি-টু-জি ভিত্তিতে আমদানির মোট পরিমাণের মধ্যে রয়েছে গ্যাস অয়েল ১৯.১০ লাখ মেট্রিক টন, জেট এ-১ জ্বালানি ৩.৬৫ লাখ মেট্রিক টন, মোগ্যাস ১.২৫ লাখ মেট্রিক টন, ফার্নেস অয়েল ৪.৫০ লাখ মেট্রিক টন এবং মেরিন ফুয়েল ৪৫ হাজার মেট্রিক টন, যা মোট ২৮ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন। বিপিসি বর্তমানে ২০১৬ সাল থেকে জি-টু-জি ভিত্তিতে এবং উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে জ্বালানি তেল আমদানি করে আসছে। মোট চাহিদার ৫০ শতাংশ জি-টু-জি ভিত্তিতে এবং ৫০ শতাংশ আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে আমদানি করার নীতি মেনে আসছে। ২০২৫ সালের আমদানির ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে বলে জানা গেছে।

২০২৫ সালের জন্য অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বা ক্রুড অয়েল আমদানির পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ সরকার। বিপিসি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় সৌদি আরবের সৌদি আরামকো থেকে অ্যারাবিয়ান লাইট ক্রুড (এএলসি) এবং আবুধাবির অ্যাডনক থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি করে। ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) ফিড ডিজাইন অনুযায়ী এই দুটি ক্রুড অয়েল প্রক্রিয়াকরণের জন্য অধিক উপযোগী, তাই টেন্ডার প্রক্রিয়ার বাইরে সরাসরি এই তেল আমদানি করা হয়। ২০২৫ সালের জন্য মোট ১৩ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে ৭ লাখ মেট্রিক টন এবং আবুধাবি থেকে ৬ লাখ মেট্রিক টন তেল আমদানি করা হবে। রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে এবং জনস্বার্থে, পিপিএ ২০০৬ এর ৬৮(১) ধারা এবং পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৭৬(২) অনুযায়ী এই ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

বর্তমানে দেশের বিদ্যুৎ, সার, এবং শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য জরুরি ভিত্তিতে স্পট মার্কেট থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করা হচ্ছে। এই বছরের ১০ থেকে ১১ নভেম্বরের মধ্যে ৩০তম কার্গো এলএনজি আমদানি করার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা কমিটির বৈঠকে অনুমোদন পেয়েছে। এলএনজি সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে আমদানি করার জন্য প্রয়োজনীয় বিধানও প্রয়োগ করা হয়েছে। পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৭৩(৭)-এ বলা আছে যে কমপক্ষে তিনটি গ্রহণযোগ্য কোটেশন না পাওয়া গেলে কোটেশনগুলো বাতিল করে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। এবারের পুনঃকোটেশন আহ্বান করা হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব জমা দেয়, তাই সরাসরি ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।

বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে জ্বালানি তেল ও গ্যাস আমদানির জন্য একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করে আসছে। জ্বালানি খাতে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ বজায় রাখতে সরকারের পক্ষে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের পর্যাপ্ত মজুত নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে আন্তর্জাতিক বাজারের অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে সরকার নিয়মিত স্পট মার্কেট ও দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি ও তেল আমদানি করে থাকে। সরকার জ্বালানি আমদানিতে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অবলম্বন করছে, বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজন ও জনস্বার্থে। এর ফলে দ্রুত সময়ে জ্বালানি মজুত করা সম্ভব হয় এবং বাজারে জ্বালানির অভাবজনিত ঝুঁকি হ্রাস পায়। সরকারের এই নীতিগত অনুমোদনের ফলে বাংলাদেশে জ্বালানি সরবরাহে কোনো প্রকার ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিপিসি বর্তমানে জ্বালানি আমদানিতে স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোও এ নিয়ে যথাযথ তদারকি করছে। এই আমদানির উদ্যোগগুলোর সফল বাস্তবায়ন জ্বালানি সংকট মোকাবিলা করতে সহায়তা করবে এবং দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। বাংলাদেশ সরকার ও বিপিসি যৌথভাবে তেল ও গ্যাসের পরিমাণ, গুণগত মান এবং সঠিক বিতরণের দিকেও নজর রাখছে, যাতে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ করা যায়। এ ধরনের নীতিগত অনুমোদন ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ও জ্বালানি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।