বাংলাদেশি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স মালদ্বীপে সব শীর্ষ পাঁচটি দেশের মধ্যে প্রথম অবস্থানে রয়েছে। মালদ্বীপের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত বার্ষিক রিপোর্ট বুলেটিনে এই তথ্য উঠে এসেছে। ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপে বাংলাদেশি কর্মীরা বেশ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন। ২০২৩ সালে মালদ্বীপ থেকে মোট বিদেশি কর্মীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ ছিল প্রায় ৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, প্রবাসী বাংলাদেশিরা ৮৪ শতাংশ বিদেশি রেমিট্যান্সের মধ্যে প্রায় ৫৪ শতাংশ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। মালদ্বীপে প্রায় ৬ লাখ মানুষের মধ্যে এক চতুর্থাংশই প্রবাসী বাংলাদেশি।
তাদের শ্রমের মাধ্যমে পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি বড় ভূমিকা রাখছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও প্রবাসীরা ভিসা ও চাকরির ক্ষেত্রে নানা সংকটে রয়েছেন। মালদ্বীপ সরকার ২০২৩ সালে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য ভিসা পুনরায় চালু করলেও বিভিন্ন ধরনের জালিয়াতি ও অনিয়মের কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি, মালদ্বীপে প্রতিদিন বৈধ ও অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড় অভিযানের ফলে অনেক বাংলাদেশি কর্মী বিপদের মুখে রয়েছেন।
রেমিট্যান্স প্রবাহে স্থিতিশীলতা ও প্রবাসীদের ব্যাংকিং সুবিধার দাবি : প্রবাসী বাংলাদেশিরা মনে করছেন, মালদ্বীপে একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা খোলা হলে রেমিট্যান্স প্রেরণের প্রক্রিয়া সহজ ও সাশ্রয়ী হবে। বর্তমানে অনেক প্রবাসী ব্যাংকিং সুবিধা না পেয়ে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন। বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানো ব্যবস্থা বৃদ্ধি করার জন্য মালদ্বীপ ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে হবে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। মালদ্বীপ মনিটরিং অথরিটি প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে, বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণ গত বছরের তুলনায় ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যদি স্থানীয় মুদ্রায় অর্থ প্রেরণের ব্যবস্থা করা হয়, তবে রেমিট্যান্স প্রবাহ অন্তত তিনগুণ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। মালদ্বীপে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবাহের স্থিতিশীলতা বাড়বে এবং হুন্ডির অপতৎপরতা হ্রাস পাবে। এটি প্রবাসীদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্ব : অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, মালদ্বীপের সঙ্গে বাংলাদেশ আরও শক্তিশালী কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করলে শ্রম বাজার সম্প্রসারণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের শ্রম ও অর্থনৈতিক ভূমিকা বিবেচনায় মালদ্বীপে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বশীল অবস্থান নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ বলে তারা মতামত ব্যক্ত করেছেন। এছাড়া, মালদ্বীপে স্থায়ী বাণিজ্যিক ব্যাংক শাখা স্থাপনের মাধ্যমে প্রবাসীরা আরও বেশি সুবিধা পেতে পারবেন বলে অনেকেই আশা করছেন।