ব্যাপক দরপতনের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দেশে ফিরে গত বুধবার শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি’র (বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন) সঙ্গে বৈঠক করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক দরপতন রোধে করণীয় নির্ধারণে এই বৈঠকে বিশেষ আলোচনা করা হয়। বৈঠক শেষে ড. আহমেদ বলেন, শেয়ারবাজারের সমস্যাগুলো সমাধানে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হবে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকারের পদক্ষেপের ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানান তিনি। ঢাকার আগারগাঁওয়ে বিএসইসি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বিএসইসি’র শীর্ষ নেতৃত্বসহ শেয়ারবাজার অনিয়ম তদন্তে গঠিত বিশেষ কমিটির সদস্য ও শেয়ারবাজার সংস্কারে নিয়োজিত টাস্কফোর্সের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। অর্থ উপদেষ্টা জানান, শেয়ারবাজারের সমস্যা সমাধানে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। দেশের শেয়ারবাজারকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে তারা কাজ করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে জরুরি এক বৈঠকে বিএসইসি’র চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ জানান, শেয়ারবাজারে লেনদেন নিষ্পত্তির সময় কমানো, মূলধনি ক্ষতির ক্ষেত্রগুলো শনাক্ত করে পুনর্গঠন করা, শেয়ারবাজারে বেশি সম্পদশালী বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে মূলধনি মুনাফার করহার হ্রাস এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিনিয়োগ সংস্থা আইসিবির (ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) বিনিয়োগ ক্ষমতা বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ ছাড়াও জরিমানার অর্থ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা খাতে ব্যবহার করার পরিকল্পনাও আলোচনা করা হয়। শেয়ারবাজারের গভীরতা বাড়াতে ও এর অগ্রগতি নিশ্চিত করতে বিএসইসি চেয়ারম্যান আরো জানান, দেশের বৃহৎ সরকারি লাভজনক কোম্পানি এবং দেশে ব্যবসারত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
দরপতনের পরে শেয়ারবাজারের ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত : শেয়ারবাজারে টানা দরপতনের পর গত মঙ্গলবার বাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসই’র (ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স প্রায় আড়াই শতাংশ বা ১১৮ পয়েন্ট বেড়ে উল্লেখযোগ্য এককদিনের উত্থান লাভ করে। গতকালও এই সূচকের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। মোট ৩৯৭ তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৭২টির শেয়ার মূল্য বেড়েছে, যা বাজারের প্রায় ৯৪ শতাংশ। গত দুই দিনের অব্যাহত উত্থানে ডিএসইএক্স সূচক বৃদ্ধি পেয়েছে ২৬৬ পয়েন্ট। সূচকের এমন বৃদ্ধি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কিছুটা ফিরিয়ে এনেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিএসইসি’র সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টার বৈঠক ও তাদের প্রণীত পরিকল্পনার প্রতিশ্রুতি বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
লেনদেনের মাত্রা বৃদ্ধি : গতকাল শেয়ারবাজারে মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৫১৯ কোটি টাকা, যা আগের দিনের তুলনায় ১৭৩ কোটি টাকা বেশি। ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার ২১ কোটি টাকা মূল্যের লেনদেনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ স্থানে ছিল, যেখানে আরো সাতটি কোম্পানির শেয়ার ১০ কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়েছে। ব্যাংক খাতে ৯৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে, যা মোট লেনদেনের ১৯ শতাংশেরও বেশি। এ ছাড়া দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওষুধ ও রসায়ন খাতে প্রায় ৮৯ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা মোটের প্রায় ১৭ শতাংশ। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একক কোম্পানি বা খাতভিত্তিক ক্রয়ের চেয়ে সমানভাবে বিভিন্ন খাতের শেয়ার ক্রয়ের প্রবণতা লক্ষ করা গেছে, যা বাজারের গভীরতার প্রতিফলন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।