ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাংলাদেশে গার্মেন্টস রপ্তানির নতুন রুট

মালদ্বীপের মাধ্যমে বিশ্ববাজারে প্রবেশ
বাংলাদেশে গার্মেন্টস রপ্তানির নতুন রুট

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে পরিচিত। কিন্তু সম্প্রতি, বাংলাদেশের সরকারের একটি সিদ্ধান্ত ভারতের বিমানবন্দর ও নৌবন্দরগুলোতে তৈরি পোশাক রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ এখন মালদ্বীপের মাধ্যমে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি করছে। এই পরিবর্তনের ফলে ভারতীয় বন্দরের রাজস্বে ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে, এমনটি জানিয়েছেন কিছু ভারতীয় কর্মকর্তা। ভারতের বিশেষ সংবাদমাধ্যম মিন্টের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এমএসসি এজেন্সি (ইন্ডিয়া) প্রাইভেট লিমিটেডের মহাপরিচালক দীপক তিওয়ারি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের পণ্য আগে ভারতীয় বিমানবন্দরের মাধ্যমে পাঠানো হতো। কিন্তু বর্তমানে তারা অন্যান্য রুট ব্যবহার করছে। এর অর্থ হল, ভারত যে রাজস্ব পেত সেটি এখন পাচ্ছে না।’ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি দেশের অর্থনীতিতে একটি মেরুদণ্ডের মতো। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ গার্মেন্টস রপ্তানিকারক দেশ এবং ভারতের মাধ্যমে বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করতো। কিন্তু এখন বাংলাদেশ তার গার্মেন্টস পণ্য জাহাজে করে মালদ্বীপে পাঠাচ্ছে এবং সেখান থেকে বিমানে করে বিশ্বের বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে।

ভারতীয় নৌ ও বিমানবন্দরগুলোর রাজস্ব হ্রাসের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের এই পদক্ষেপ ভারতের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ককে দুর্বল করে দিতে পারে, এবং এতে লজিস্টিক ও কাঠামোগত প্রকল্পগুলোর সহযোগিতামূলক সুযোগগুলোও শঙ্কায় পড়তে পারে। বাংলাদেশ সরকারের এই সিদ্ধান্ত ভারতের জন্য একটি সংকেত হতে পারে যে তারা এখন নিজেদের সাপ্লাই চেইনের ওপর আরো নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে চাচ্ছে। অন্যদিকে, ভারতের অ্যাপারেল এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলের নির্বাহী সদস্যরা বলছেন, বাংলাদেশ ভারতের মাধ্যমে তৈরি পোশাক রপ্তানি বন্ধ করলেও তাদের জন্য খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না।

তাদের দাবি, ভারতীয় বিমানবন্দরগুলো এরই মধ্যে অনেক ব্যস্ত এবং তারা বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি বন্ধের জন্য সরকারকে অনুরোধ করেছেন। ভারতের কর্মকর্তারা মনে করেন, বাংলাদেশের রপ্তানি নীতি পরিবর্তনের ফলে ভারত সরকার একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজছে, যাতে ভারতীয় বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানি নিশ্চিত হয়। এই প্রক্রিয়ায় ভারতের স্বার্থ লাভজনক থাকবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তারা।

বিশেষজ্ঞ অরুণ কুমার বলেন, ‘রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন রুটের মাধ্যমে বাংলাদেশ কৌশলগত সুবিধা অর্জন করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গার্মেন্টস পণ্যকে পঁচনশীল পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সঠিক সময়ের মধ্যে পণ্য রপ্তানি না হলে অর্ডার বাতিল হয়ে যায়।’ এদিকে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা কমেছে। ২০২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৪.৩৪ শতাংশ কমে ৪৪.৪৭ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে।

গত বছর বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় সর্ববৃহৎ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মর্যাদা অর্জন করেছিল।ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কী হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।

তবে বাংলাদেশের এই নতুন রপ্তানি কৌশল ব্যবসায়িক বিশ্লেষকদের কাছে একটি আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের বন্দরগুলোতে রাজস্ব হ্রাস এবং বাংলাদেশের রপ্তানির নতুন পথ উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য এই পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। ভারতের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কের স্থিতিশীলতা এবং বাংলাদেশের সাপ্লাই চেইনের নিয়ন্ত্রণ এই সময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মালদ্বীপের মাধ্যমে রপ্তানি চালু হওয়া বাংলাদেশের জন্য নতুন দিগন্তের উন্মোচন হলেও, এটি ভারতীয় বন্দরের রাজস্বের ওপর প্রভাব ফেলার পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককেও নতুন করে পরীক্ষা করবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত