চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ৮,৩৩৩ কোটি টাকায়, যা বিগত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। অর্থনীতিতে এই ঊর্ধ্বমুখী সঞ্চয়পত্র বিক্রি বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হলেও গত অর্থবছরের বিপরীত প্রেক্ষাপটে পরিবর্তনের কারণগুলো বিশ্লেষণ করা জরুরি। উল্লেখ্য, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বিগত বছরের তুলনায় ২১,১২৪ কোটি টাকা কমে গিয়েছিল এবং বিক্রির তুলনায় ভাঙানো বেশি ছিল ১,২৬৫ কোটি টাকা। ৫ আগস্ট সরকারের পরিবর্তনের পর থেকে বিভিন্ন খাতে পরিচালন ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়, বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের কারণে এই ব্যয় হ্রাস পেয়েছে। মন্ত্রী, এমপি ও বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তাদের খাতে আগের মতো নিয়মিত ব্যয় না হওয়া এবং সরকারি খরচে জবাবদিহিতা বাড়ানোর ফলে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সরকারের ঋণ নির্ভরতা হ্রাস পেয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমান সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ গ্রহণ করছে না বরং বিগত সময়ে নেয়া ঋণের একটি অংশও পরিশোধ করেছে। পরিসংখ্যান বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১৮,২৫০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করেছে সরকার।
পাশাপাশি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ২৮,৯৫২ কোটি টাকা ঋণ নিলেও মোট ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যাংকিং খাতে নিট ঋণ বেড়েছে মাত্র ১০,৭০২ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে সঞ্চয়পত্রে সরকারের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩,৫৪,৬০২ কোটি টাকা, যা জুন মাস শেষে ছিল ৩,৪৬,২৬৯ কোটি টাকা। জুলাই, আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে সঞ্চয়পত্র থেকে পাওয়া ঋণের পরিমাণ যথাক্রমে ২,১৮৮ কোটি, ২,০৩৬ কোটি এবং ৪,১০৯ কোটি টাকা। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে। কয়েক দফায় রেপো রেট বাড়িয়ে এখন তা ১০ শতাংশে নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারি ঋণ মেটানোর ক্ষেত্রে নতুন করে টাকা ছাপানোর পরিবর্তে সংকোচনমূলক এই পদক্ষেপ অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষা এবং মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমাতে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। এই পদক্ষেপে আগের সরকারের নেয়া ‘ওভারড্রাফট’ (ওডি) ঋণ নিয়ে নানা অভিযোগও সামনে এসেছে। আগের সরকার যেখানে সর্বোচ্চ ৮,০০০ কোটি টাকা ওডি নিতে পারত, সেখানে ওই সময়ে ৪৮,৭৪৫ কোটি টাকা ওডি নেয়া হয় এবং তা সরকারি প্রতিবেদনে উল্লেখিত হয়নি। এই অসংগতির কারণে বিগত অর্থবছরের প্রতিবেদনে সরকারি ঋণ হ্রাস পেলেও প্রকৃতপক্ষে তা বেড়েছিল বলে সংশ্লিষ্টরা মতামত দিয়েছেন। সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ সংগ্রহের বর্তমান প্রবণতা সরকার পরিচালন ব্যয়ের কৃচ্ছ্রসাধনের জন্যই সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীরা সরকারি মুনাফার দিকে ঝুঁকছেন। সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নতুন ঋণ না নিয়ে পরিচালন ব্যয়ের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করায় সঞ্চয়পত্রের চাহিদা বেড়েছে।