মোবাইল অপারেটররা

ফাইবার অপটিক ক্যাবল স্থাপনের অনুমতি চায়

প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

মোবাইল ফোন অপারেটররা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ফাইবার অপটিক ক্যাবল সেবা প্রদানকারী ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) অপারেটরদের সেবা নিয়ে দীর্ঘদিনের অসন্তোষের কথা পুনরায় তুলে ধরেছে। তারা একই সাথে ফাইবার স্থাপনের অনুমতি চেয়ে বিটিআরসির কাছে দাবি জানাচ্ছে, যাতে তারা নিজেরাই খরচ এবং সেবার মান আরো উন্নত করতে পারে। রাজধানীর একটি হোটেলে টেলিযোগাযোগ বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন টিআরএনবি আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বিষয়টি সামনে আসে। আলোচনায় মোবাইল অপারেটরগুলোর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন রবি, বাংলালিংক এবং টেলিটকের প্রতিনিধিরা। এনটিটিএন অপারেটরদের পক্ষে ছিলেন ‘ফাইবার অ্যাট হোম’ ও ‘সামিট কমিউনেকশন্স’-এর প্রতিনিধিরা। মোবাইল অপারেটরদের অভিযোগ, এনটিটিএন অপারেটররা তাদের ফাইবার অপটিক সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় প্রতিযোগিতার অভাবের কারণে সেবার মান ও খরচে প্রভাব পড়ছে। তারা মনে করেন, এনটিটিএন অপারেটরদের নির্দিষ্ট কিছু সীমাবদ্ধতা তুলে দিয়ে প্রতিযোগিতা উন্মুক্ত করা উচিত।

রবির চিফ করপোরেট ও রেগুলেটরি অফিসার সাহেদুল আলম অভিযোগ করেন, ‘এনটিটিএন অপারেটরদের মূল দায়িত্ব ছিল আমাদের ফাইবার সেবা দেয়া, কিন্তু তারা তা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের বিভিন্ন স্থানে ফাইবার সংযোগে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে আমরা গ্রাহকদের মানসম্পন্ন সেবা দিতে পারছি না।’ এদিকে এনটিটিএন অপারেটররা দাবি করেন, কমন নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার মাধ্যমে খরচ কমিয়ে আনায় ডেটার দাম কমেছে। ‘সামিট কমিউনেকশন্স’-এর চিফ নেটওয়ার্ক আর্কিটেক্ট ফররুখ ইমতিয়াজ জানান, এনটিটিএন অপারেটরদের সাধারণ নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা স্থাপনের ফলে ১০০ ভাগ খরচ কমানো সম্ভব হয়েছে। তবে এনটিটিএন অপারেটরদের মতে, বিটিআরসির নীতিমালায় কিছু অস্পষ্টতা রয়েছে। ফররুখ ইমতিয়াজ বলেন, ‘এনটিটিএন কী ধরনের সেবা দিতে পারবে, সে বিষয়ে বিটিআরসি থেকে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। আমাদের মনে হচ্ছে, বিটিআরসি একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করলে দ্বন্দ্ব মিটতে পারে।’ বাংলালিংকের করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান তাইমুর রহমান বলেন, ‘মোবাইল অপারেটরদের জন্যও ফাইবার স্থাপনের সুযোগ থাকা উচিত। প্রয়োজনে মোবাইল অপারেটররা নিজেই তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ফাইবার নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারবে, যা বর্তমানে এনটিটিএন অপারেটরদের কাছে নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে।’

এনটিটিএন কোম্পানি ‘ফাইবার অ্যাট হোম’-এর চেয়ারম্যান ময়নুল হক সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা কমন নেটওয়ার্ক হিসেবে ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে কাজ করছি। আমাদের লক্ষ্য হলো প্রতিটি অঞ্চলে সেবা পৌঁছে দেয়া, যা একটি সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়সাপেক্ষ কাজ। মোবাইল অপারেটরদের সুবিধা বিবেচনা করেই আমাদের সেবাগুলো তৈরি করা হচ্ছে।’

সভার শেষে বিটিআরসির চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী বলেন, ‘ইন্টারনেট এখন মানুষের মৌলিক অধিকার হওয়া উচিত। তাই এই খাতের সব অংশীজনের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে আমরা কাজ করছি। তবে কাউকে খাতের ওপর একক নিয়ন্ত্রণ করতে দেয়া হবে না। প্রয়োজন হলে বিটিআরসি কঠোর পদক্ষেপ নেবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা একটি ব্রডব্যান্ড নীতি প্রণয়ন করেছি, যা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আমাদের ডার্ককোরের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে এবং তা সামনে চলার পথে সমস্যার সমাধান হিসেবে কার্যকর হতে পারে।’ সভায় এনটিটিএন অপারেটর এবং মোবাইল অপারেটরদের মধ্যে মতবিরোধকে ঘিরে বিটিআরসি সুস্পষ্ট নীতিমালার ওপর জোর দিয়েছেন এবং দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য একটি টেকসই সমাধান খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন।