ই-কমার্স প্রতারণা

গ্রাহকদের জন্য সরকারের নতুন উদ্যোগ

প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল ২০২০ সালে, কোভিড মহামারির সময়। মহামারিকালে লোকজন যখন ঘরবন্দি ছিলেন, তখন অনলাইন কেনাকাটায় আগ্রহ বাড়ে এবং বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান লোভনীয় মূল্যছাড়ের মাধ্যমে ভোক্তাদের আকর্ষণ করে। তবে সেই সুবিধা নিতে গিয়ে অনেক গ্রাহক ফাঁদে পড়ে যান এবং আগাম মূল্য পরিশোধ করেও পণ্য পাননি। ইভ্যালি, ইঅরেঞ্জ, কিউকুম, আলেশামার্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ভোক্তারা হাজার কোটি টাকা আটকে থাকার অভিযোগ তোলেন। ২০২১ সালে সরকার ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা প্রণয়ন করে এই খাতে শৃঙ্খলা আনতে চেষ্টা করে, কিন্তু ততক্ষণে অনেক প্রতিষ্ঠান ভোক্তাদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ নিয়ে পণ্য সরবরাহে ব্যর্থ হয়। নতুন নীতিমালা কার্যকর হওয়ার পর এসব প্রতিষ্ঠানের পেমেন্ট গেটওয়েতে অর্থ আটকে যায় এবং সেই অর্থ গ্রাহকরা আর ফেরত পাননি। সংশ্লিষ্ট তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৬৮ হাজারের বেশি ভোক্তা তাদের আটকে থাকা প্রায় ৪১৮ কোটি টাকা ফেরত পেয়েছেন। তবে এখনো অনেক ভোক্তা তাদের অর্থ ফেরত পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেল থেকে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গ্রাহকদের আগামী ১৪ নভেম্বরের মধ্যে অভিযোগ জানাতে বলা হয়েছে। যারা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পণ্য বা অর্থ ফেরত পাননি তাদের জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অনলাইন পোর্টালে অভিযোগ জমা দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যেসব ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান এখনো গ্রাহকের পাওনা ফেরত দিতে পারেনি, তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দাখিল করতে হবে। এর মধ্যে ইভ্যালি, কিউকুম, আলেশামার্ট, আনন্দবাজার, থলি ডটকম, শ্রেষ্ঠ, আলিফওয়ার্ল্ড, বাংলাদেশ ডিল, সপেটিকসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের পরিচালক সাঈদ আলী বলেন, ‘গ্রাহকের টাকা ফেরত দেয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং এই প্রক্রিয়া আরো শক্তিশালী করার জন্য নতুন অভিযোগ গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নতুন অভিযোগ পাওয়ার পর গ্রাহকের পাওনা ফেরত দেয়া সহজ হবে।’ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহক ও বিক্রেতাদের পাওনার তালিকা দাখিল করতে ব্যর্থ হয়, তবে পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা অর্থ পর্যায়ক্রমে গ্রাহক ও বিক্রেতাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হবে। ২০২১ সালে প্রণীত ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা ডিজিটাল কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোর কার্যক্রমে শৃঙ্খলা আনতে চেষ্টা করে। এই নীতিমালার মাধ্যমে পেমেন্ট গেটওয়ে ও আগাম পেমেন্টের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের কাছ থেকে আগাম অর্থ নিয়ে প্রতারণা করেছে, যা গ্রাহকের অর্থ আটকে থাকার মূল কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বর্তমানে সরকার পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে গ্রাহকদের আটকে থাকা টাকা ফেরত দিতে মনোযোগ দিয়েছে। চলতি বছরে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক ও বিক্রেতা তাদের আটকে থাকা অর্থ ফেরত পেয়েছেন। গত ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত ৬৮ হাজার ৭২ জন গ্রাহক প্রায় ৪১৮ কোটি টাকা ফেরত পেয়েছেন, যা একটি আশাব্যঞ্জক পদক্ষেপ। তবে আরো অনেক গ্রাহক তাদের পাওনা ফেরত পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন এবং তাদের অভিযোগ গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। যেসব গ্রাহক বা বিক্রেতা এখনো তাদের পাওনা ফেরত পাননি, তাদের জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অনলাইন পোর্টালে অভিযোগ দাখিল করতে বলা হয়েছে। এই অধিদপ্তর পর্যায়ক্রমে অভিযোগগুলো নিষ্পত্তি করে পেমেন্ট গেটওয়ে কিংবা ব্যাংক হিসাবে জব্দকৃত টাকা ফেরত দেবে। অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ের পর গ্রাহকদের টাকা দ্রুত ফেরত দেয়ার প্রক্রিয়া আরো সহজ হবে। বর্তমান সময়ে ই-কমার্স খাতকে শৃঙ্খলায় আনতে এবং গ্রাহকের অধিকার সুরক্ষিত রাখতে সরকার আরো কঠোর উদ্যোগ নিয়েছে। বিভিন্ন অনিয়ম রোধে সরকারের এ ধরনের উদ্যোগ গ্রাহকদের ই-কমার্সের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো সঠিকভাবে পরিচালনা করতে এ ধরনের পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ই-কমার্সে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের পাওনা ফেরত দেয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, গ্রাহক ও বিক্রেতা তাদের পাওনা ফেরত পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অভিযোগ দাখিল করতে পারছেন। অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে আটকে থাকা অর্থ ফেরত দেয়ার প্রক্রিয়া আরো ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ই-কমার্স প্রতারণা রোধে সরকারের গৃহীত এই পদক্ষেপ ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা করার পাশাপাশি ডিজিটাল কমার্স খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া সফল হলে ভোক্তারা ই-কমার্সে কেনাকাটায় আরো আস্থা পাবে এবং ডিজিটাল কমার্স খাত আরো শক্তিশালী হবে।