আয়কর রিটার্ন দাখিল এখন শুধু উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের জন্য নয়, বরং যাদের আয় একটি নির্দিষ্ট সীমার নিচে থাকে তারাও বিভিন্ন সেবা গ্রহণের জন্য রিটার্ন জমা দিতে বাধ্য। এই ব্যবস্থার আওতায় এমন ব্যক্তিদেরও রিটার্ন দাখিল করতে হবে যাদের আয়ের উপর কর প্রযোজ্য নয়; এ ক্ষেত্রে তারা ‘জিরো রিটার্ন’ জমা দিতে পারবেন। আয়কর দাখিলের ক্ষেত্রে প্রধানত দুটি প্রধান শ্রেণি রয়েছে প্রথমতো, যাদের আয় করযোগ্য পরিমাণে রয়েছে এবং দ্বিতীয়ত, যাদের আয় কম হলেও কিছু নির্দিষ্ট সেবা গ্রহণের জন্য রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নির্দিষ্ট কিছু আয়ের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে যার উপরে আয় হলে ব্যক্তিদের রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
এই পরিমাণগুলো আয়ের ধরন ও ব্যক্তির অবস্থা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে : ১. সাধারণ করদাতাদের জন্য- আয় বছরে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি হলে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক। ২. নারী ও ৬৫ বছরের ঊর্ধ্ব ব্যক্তির জন্য- তাদের আয় ৪ লাখ টাকার বেশি হলে রিটার্ন দাখিলের প্রয়োজন। ৩. তৃতীয় লিঙ্গের ও প্রতিবন্ধী করদাতাদের জন্য- এই শ্রেণির ব্যক্তির আয় ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকার বেশি হলে রিটার্ন জমা দিতে হবে। ৪. যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য- গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের আয় ৫ লাখ টাকার বেশি হলে রিটার্ন জমা দিতে হবে।
অনেক সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রেও রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি : ১. ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ- যদি ঋণগ্রহীতার বার্ষিক আয় করযোগ্য না হয়, তবুও ২০ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে ঋণ গ্রহণের জন্য রিটার্ন জমা দিতে হবে। ২. ক্রেডিট কার্ড প্রাপ্তি- ক্রেডিট কার্ড পেতে হলে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক।
৩. বিভিন্ন ব্যবসায়িক লাইসেন্স ও অনুমোদন- ট্রেড লাইসেন্স, সাধারণ বিমা লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, ফায়ার লাইসেন্স, বিএসটিআই লাইসেন্সসহ অনেক লাইসেন্সের ক্ষেত্রে রিটার্ন জমা দেয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ৪. সম্পত্তি লেনদেন- ১০ লাখ টাকার অধিক মূল্যের জমি বা অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রয়, লিজ বা হস্তান্তরের জন্য রিটার্ন দাখিল প্রয়োজন। ৫. বৈদেশিক ঋণপত্র খোলার জন্য- আমদানির উদ্দেশ্যে ঋণপত্র খুলতে হলে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক।
৬. বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি পেশার ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ও নবায়ন- যেমন আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সিভিল সার্ভেয়ার ইত্যাদি পেশায় নিবন্ধন বা লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিল প্রয়োজন। অনেক ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি বা হ্রাসকৃত করযোগ্য আয় থাকলেও রিটার্ন দাখিল করতে হবে। যেমন, কর অব্যাহতি প্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্যও কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যদিও তাদের আয় করের আওতায় পড়ে না।
এ ছাড়াও কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে করদাতাদের রিটার্ন দাখিল প্রয়োজন, যেমন : ১. বিমা এজেন্সি সার্টিফিকেটের নবায়ন। ২. শেয়ারড ইকোনোমিক এক্টিভিটিজে অংশগ্রহণ। ৩. এনজিও বিষয়ক লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়ন। ৪. বিদ্যুৎ, গ্যাস সংযোগের জন্য রিটার্ন জমা। এই নিয়মাবলির আওতায়, আয়কর রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে একটি বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই পরিবর্তনগুলো সাধারণ জনগণকে তাদের সঠিক আয়কর পরিস্থিতির উপর আরো মনোযোগী হতে সাহায্য করবে।