গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। তিন মাস আগে দায়িত্ব নিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। তখন জনগণের প্রত্যাশা ছিল যে সিন্ডিকেট ভেঙে বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে তারা। তবে, নানা পদক্ষেপ গ্রহণের পরেও বাজারে এসব উদ্যোগের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না, বরং বাড়ছে পণ্যের দাম। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতা ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে। গত শুক্রবার কারওয়ান বাজারের পাইকারি আড়ত থেকে এক পাল্লা আলু কিনে ফিরছিলেন আলমগীর হোসেন। তিনি জানান, এক পাল্লা (৫ কেজি) আলু কিনেছেন ৩৫০ টাকায় (প্রতি কেজি ৭০ টাকা)। তার বক্তব্যে হতাশা ছিল, ‘আগের থেকে দাম আরো বাড়ছে! আগে এত বেশি ছিল না।’ পাশাপাশি দেশি পেঁয়াজ ১৬০ টাকা এবং চালের দাম কেজি প্রতি ২০০ টাকা বেড়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
রাজধানীর খুচরা বাজারে গত সপ্তাহের চেয়ে আলুর দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে কেজি প্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারে পাইকারি পর্যায়ে দেশি আলুর দাম ৬১ থেকে ৬৫ টাকা প্রতি কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা। বিক্রমপুর ভান্ডারের বিক্রেতা ওহিদ মিয়া বলেন, ‘আমার ৪০ বছরের ব্যবসায় আলুর এত দাম আগে দেখিনি।’ দেশি পেঁয়াজ এখনো ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আমদানি করা পেঁয়াজের দামও কম নয়, ১১০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। দেশি রসুন ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায়, আমদানি করা রসুন ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চালের বাজারেও উর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন জাতের চালের দাম প্রতি কেজিতে ৫৫ থেকে ৭৫ টাকার মধ্যে, যা গত সপ্তাহে আরো কিছুটা কম ছিল। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের পাইকারি চাল বিক্রেতা আবদুল মতিন জানান, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত আমদানি বাড়ানো না হবে, দাম কমার সম্ভাবনা কম।’ তিনি উল্লেখ করেন, ব্রি-২৮ জাতের চালের ৫০ কেজির বস্তা বর্তমানে ৩০০০ থেকে ৩১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবজির বাজারেও দেখা যাচ্ছে দাম স্থিতিশীল রয়েছে, কিন্তু বেশ কিছু পণ্যের দাম ক্রমাগত উচ্চ স্তরে থাকছে। মুলা, কুমড়া, বেগুন, বরবটি, করলা, ঝিঙা প্রভৃতি সবজি ৭০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থা কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাবেক সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘মানুষের কষ্ট বেড়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। বর্তমান সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে, কিন্তু বাজারে তার প্রতিফলন আসছে না। আরো জোরালো পদক্ষেপ দরকার।’ তিনি মনে করেন, ‘দাম বৃদ্ধির কারণ একমাত্র সিন্ডিকেট নয়, আরো কারণ রয়েছে।’ বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজার ব্যবস্থায় অস্বচ্ছতা, পর্যাপ্ত সরবরাহের ঘাটতি এবং আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাবও এই মূল্যস্ফীতির কারণ হতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে বাজারে সঠিকভাবে পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান আরো নিচে নেমে যেতে পারে।