বিশ্বজুড়ে খাদ্যের দাম বেড়েছে, ১৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ সূচক

বাংলাদেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশে পৌঁছেছে

প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

অক্টোবর মাসে খাদ্যমূল্যের বৈশ্বিক সূচক উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা গত ১৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত মাসে উদ্ভিজ্জ তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং শস্যজাতীয় খাদ্যের দাম বেড়ে খাদ্য মূল্যসূচকের বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। এফএও খাদ্যমূল্যসূচক হিসাব করতে প্রধানত পাঁচটি খাদ্য পণ্যের দাম বিবেচনা করে- মাংস, দুগ্ধজাত খাবার, শস্য, উদ্ভিজ্জ তেল এবং চিনি। অক্টোবরে মাংস ছাড়া এই সবগুলো পণ্যেরই দাম বেড়েছে। গত অক্টোবর মাসে এফএও’র খাদ্যমূল্যসূচক ১২৭ দশমিক ৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ১২৫ দশমিক ৩ পয়েন্ট। জুলাই থেকে টানা তিন মাস এফএওর খাদ্য সূচক বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিশেষ করে উদ্ভিজ্জ তেলের দাম এ সময় ৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। পাম, সয়াবিন এবং সূর্যমুখী তেলের উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে এই মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং কৃষির অনুকূল পরিস্থিতি না থাকায় এসব তেলের উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অক্টোবর মাসে উদ্ভিজ্জ তেলের সূচক এক লাফে ১০ পয়েন্ট বেড়ে ১৫২ দশমিক ৭ পয়েন্টে পৌঁছেছে। এই তেলের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে এফএও জানিয়েছে, বিকল্প উৎসের অভাব এবং উৎপাদন সংকটে বাজারে সরবরাহের সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে, যার প্রভাব সরাসরি মূল্যস্ফীতিতে পড়েছে। শস্যজাতীয় খাবারের মূল্যসূচক অক্টোবরে ১১৪ দশমিক ৪ পয়েন্টে উঠে এসেছে, যা সেপ্টেম্বরের তুলনায় ০ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। গম, ভুট্টা এবং চালের দামের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট এ সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বড় গম উৎপাদনকারী দেশগুলোতে খারাপ আবহাওয়ার কারণে গমের উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটেছে। পাশাপাশি কৃষ্ণসাগর অঞ্চলের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং রাশিয়ার মূল্য নিয়ন্ত্রণ নীতির প্রভাব গমের বাজারে প্রতিফলিত হয়েছে।

অন্যদিকে ব্রাজিলে ভুট্টার চাহিদা বেড়ে যাওয়া এবং আর্জেন্টিনায় চাষাবাদের দেরি হওয়ায় ভুট্টার দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। অক্টোবরে চিনির মূল্যসূচক বেড়ে ১২৯ দশমিক ৬ পয়েন্টে পৌঁছেছে, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ১২৬ দশমিক ৩ পয়েন্ট। খাদ্যের কাঁচামাল হিসেবে চিনি ব্যবহার এবং সরবরাহ সংকটের কারণে এর দাম বেড়েছে। অক্টোবর মাসে চালের বাজারে তুলনামূলক স্থিতিশীলতা দেখা গেছে। ভারত চাল রপ্তানিতে তাদের সীমাবদ্ধতা শিথিল করায় চালের দাম ৫ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। এটি চালের মূল্যসূচককে কিছুটা স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি বিশ্ববাজারে চালের সরবরাহও বাড়িয়েছে, যা অন্য খাদ্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির বিপরীতে কিছুটা হলেও ভারসাম্য এনেছে। অক্টোবরে মাংসের দাম শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে, যা এই পণ্যের দাম কমানোর ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। বিশেষ করে পোলট্রি মুরগি এবং শূকরের মাংসের ক্ষেত্রে চাহিদা কম থাকায় দাম কমেছে।

অক্টোবর মাসে মাংসের মূল্যসূচক ছিল ১২০ দশমিক ৪ পয়েন্ট, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ১২০ দশমিক ৮ পয়েন্ট। তবে দুগ্ধজাত খাবারের মূল্যসূচক বেড়ে ১৩৯ দশমিক ১ পয়েন্টে পৌঁছেছে, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ১৩৬ দশমিক ৫ পয়েন্ট। ২০২০ সালে এফএওর গড় খাদ্যমূল্যসূচক ছিল ৯৮ দশমিক ১ পয়েন্ট, যা পরবর্তী দুই বছরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে ২০২১ সালে ১২৫ দশমিক ৭ পয়েন্ট এবং ২০২২ সালে ১৪৪ দশমিক ৫ পয়েন্টে পৌঁছায়। যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী খাদ্যমূল্য এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়েছে। তবে ২০২৩ সালে কিছুটা কমে গড়ে ১২৪ দশমিক ৫ পয়েন্টে নেমে আসে। ২০২৩ সালের সর্বনিম্ন সূচক ছিল ফেব্রুয়ারিতে ১১৭ দশমিক ৪ পয়েন্ট। বাংলাদেশেও খাদ্যমূল্যস্ফীতি বেড়েছে। অক্টোবর মাসে এই হার দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশে, যা দেশের সাধারণ মানুষের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নীতি সুদহার বাড়ানো সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংক এটি রোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ভারতের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, সেদেশেও অক্টোবর মাসে খাদ্যমূল্যস্ফীতি বেড়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। বিশ্ববাজারে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ও উৎপাদন সংকটের কারণে অনেক দেশই খাদ্য আমদানি ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় সতর্কতা অবলম্বন করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসন্ন শীতকালে উৎপাদন পরিস্থিতি আরও প্রতিকূল হতে পারে, যার প্রভাব মূল্যস্ফীতিতে পড়তে পারে।