ঢাকা ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

‘দুর্ভিক্ষের শঙ্কা নেই, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আশাবাদী গভর্নর’

বিনিয়োগ ও ব্যাংক খাতে সংস্কার জোরদার হবে
‘দুর্ভিক্ষের শঙ্কা নেই, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আশাবাদী গভর্নর’

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আছে এবং দেশের অর্থনীতিতে কোনো দুর্ভিক্ষ বা ভয়াবহ সংকট দেখা দেবে না। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতির মুখে পড়েনি, আমাদের প্রবৃদ্ধি কমেনি এবং বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি হচ্ছে।’ গতকাল রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত তৃতীয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। ড. মনসুর উল্লেখ করেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিতে কোনো দেশেরই কমপক্ষে এক বছর সময় লাগে।

তিনি বলেন, ‘আমরা মাত্র চার মাস কাজ করছি; আরও আট মাস সময় প্রয়োজন। শুধু মুদ্রানীতির ওপর নির্ভর না করে প্রয়োজনীয় সব পণ্যের এলসি খোলা রাখা হয়েছে এবং আমদানির জন্য শুল্ক শিথিল করা হয়েছে।’ বেক্সিমকো শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করতে পারছিল না, এমন তথ্য তুলে ধরে গভর্নর বলেন, ‘সরকার তাদের শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার জন্য সহায়তা করছে। বেক্সিমকোয় রিসিভার নিয়োগ দিয়ে এটি সচল করা হচ্ছে; অর্থাৎ কোম্পানি বন্ধ হচ্ছে না।’

তিনি আরও জানান, ‘দেশের কোনো ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়নি বা বন্ধ করার পরিকল্পনাও নেই।’ দেশে অর্থপাচার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ড. মনসুর বলেন, দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে কয়েক লাখ কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার হয়েছে। এই অর্থ পুনরুদ্ধারে সরকারি পদক্ষেপ জোরদার করা হয়েছে এবং বিদেশি সংস্থাগুলোর সহযোগিতা গ্রহণের চেষ্টা চলছে। চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, বিশ্বব্যাংক এবং সিঙ্গাপুরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা হবে বলে জানান তিনি। ড. মনসুর বলেন, ‘আমরা চাই না যে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাক। কারণ এগুলোতে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়।’ একইসঙ্গে ব্যাংকিং খাতকে ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে দেয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। বর্তমানে ঢাকায় ব্যাংকিং কার্যক্রমের ৫৯ শতাংশ এবং চট্টগ্রামে ১৭ শতাংশ হলেও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ব্যাংকিং বিস্তারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। গভর্নর জানান, কিছু ব্যাংক নগদ সহায়তার ঘাটতিতে পড়েছে, তবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নগদ সহায়তা দেয়ার জন্য অতিরিক্ত টাকা ছাপানো হয়নি। তিনি বলেন, ‘ম্যাক্রো অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে টাকা ছাপানো থেকে বিরত আছি। ব্যাংকিং খাতকে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে আমাদের ধৈর্য ধরে কাজ করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, যারা ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ করেছে, তারা যেন বৈধ উপায়ে টাকাগুলো ফেরত দেয়। তাছাড়া, যেসব টাকা দেশের বাইরে গেছে সেগুলো ফিরিয়ে আনার জন্য আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।’

ফরেন এক্সচেঞ্জ পরিস্থিতির স্থিতিশীলতার কথা তুলে ধরে ড. মনসুর বলেন, ‘সাপ্লাই সাইডে এর মধ্যেই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ব্যাংকিং খাত সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা পাকিস্তানের থেকেও দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। তবে এটি ঠিক করতে দুই থেকে তিন বছর সময় লাগবে।‘ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং।

এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ প্রায় ৪০০ অতিথি এই সম্মেলনে অংশ নেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটের সমাধান ও ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপ, ব্যাংক খাতের সংস্কার এবং অর্থপাচার রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা এ সম্মেলনের মূল আলোচ্যবিষয় ছিল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত