শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ ও অন্যান্য দাবি নিয়ে চলমান অসন্তোষের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, যদি মালিকপক্ষ শ্রমিকদের বেতন দিতে গড়িমসি করে এবং তাদের মধ্যে সমস্যা চিহ্নিত হয়, তাহলে সেই কারখানায় প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হবে। মঙ্গলবার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা এ ঘোষণা দেন। উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘শ্রমিক ভাইবোনদের বকেয়া পাওনা অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে।
তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই দেশের পোশাক শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে এবং অর্থনীতি সচল রয়েছে। তাই শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা নিয়ে কোনো আপোষ করা হবে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন করা সব কারখানার জন্য বাধ্যতামূলক। কেউ যদি মজুরি বোর্ড বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মালিকপক্ষের সমস্যা চিহ্নিত হলে সংশ্লিষ্ট কারখানায় প্রশাসক বসানো হবে।’ গত ৫ অগাস্ট সরকারপতনের পর থেকে গাজীপুর, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন পোশাক শিল্প এলাকায় শ্রমিকরা বকেয়া বেতন ও অন্যান্য দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছেন। শ্রমিকদের দাবি মেনে না নেয়ায় অনেক জায়গায় কারখানা বন্ধ রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবারও গাজীপুর নগরীর কোনাবাড়ি এলাকায় শ্রমিকরা ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে এবং হাজিরা বোনাস বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। এর মধ্যে একটি কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে ‘ক্লাস্টার ভিত্তিতে’ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়া সাভারসহ কারখানা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ক্লাস্টার ভিত্তিতে কমিটি গঠন করতে হবে। এই কমিটি মালিকপক্ষকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবে এবং নিশ্চিত করবে যে তারা সময়মতো বেতন ও ভাতা পরিশোধ করছে কি না। শ্রমিক অসন্তোষের পেছনের কারণগুলো চিহ্নিত করে তা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’ এছাড়া, শ্রমিক অসন্তোষে বহিরাগতদের উস্কানি রয়েছে কি না, তাও কমিটির মাধ্যমে খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। শ্রম মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া বেতন পরিশোধে ব্যর্থ বার্ডস গ্রুপের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বাজেট থেকে ইন্টারেস্ট ফ্রি ১৪ কোটি টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। সরকারের এই উদ্যোগ শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারের প্রকাশ বলে মনে করা হচ্ছে। শ্রমিকদের উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের উপর ভরসা রাখুন। আমরা আপনাদের কষ্ট অনুভব করছি এবং নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে আপনাদের ন্যায্য পাওনা অবশ্যই পাবেন।’ তিনি বলেন, রাস্তাঘাট অবরোধ করে জনগণকে কষ্ট দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে হবে এবং সবার স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। শ্রমিক অসন্তোষের যৌক্তিক সমাধান ও সবার অধিকার রক্ষায় সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আশা করা হচ্ছে। পোশাক খাতের শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ এবং তাদের অধিকার নিশ্চিত করা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।