ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এলসি পরিশোধে গড়িমসি করলে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

এলসি পরিশোধে গড়িমসি করলে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণপত্র (এলসি) খোলার পর সময়মতো অর্থ পরিশোধ না করলে ব্যাংকগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ গতকাল মঙ্গলবার এই বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছে। সার্কুলারটি দেশের সকল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ নির্দেশনার আগের দিন, গত সোমবার, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ১৭টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে এক সভায় এলসির বিল পরিশোধে গড়িমসি না করার কড়া নির্দেশনা দেন। বর্তমান সময়ে ডলার সরবরাহ বাড়লেও অনেক ব্যাংক সময়মতো এলসির বিল পরিশোধ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। গভর্নরের এই হুঁশিয়ারির পরদিনই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, কিছু ব্যাংক সময়মত এলসির অর্থ পরিশোধ করছে না, যদিও ব্যাংকিং চ্যানেলে এখন ডলারের সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ব্যাংকগুলোর ডলারের অভাব নেই। এলসির বিল পরিশোধে দেরি করার ফলে দেশের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বিদেশি ব্যাংকগুলোর সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে। সার্কুলারে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে যে, এ ধরনের দেরি গ্রহণযোগ্য নয় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর অনুমোদিত ডিলারদের (এডি) বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সার্কুলারে আরো বলা হয়েছে যে, ব্যাংকগুলোকে এলসি খোলার ক্ষেত্রে আগের রেকর্ড যাচাই-বাছাই করে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া, এলসি খোলার সময় গ্রাহকদের ক্রেডিট লাইনের সীমা নিশ্চিত করার জন্যও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর জন্য নির্ধারিত ফান্ডেড ও নন ফান্ডেড ক্রেডিট লাইনের সীমা অতিক্রম না করার জন্য ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা জানান, কিছু ব্যাংক নির্ধারিত ক্রেডিট লাইন অতিক্রম করে অতিরিক্ত এলসি খুলছে। তিনি বলেন, প্রতিটি ব্যাংকের একটি নির্দিষ্ট ক্রেডিট লাইন রয়েছে, যা নির্ধারণ করে দেয় একটি ব্যাংক কী পরিমাণ এলসি খুলতে পারবে। অনেক ব্যাংক এই সীমা অতিক্রম করেও এলসি খোলার চেষ্টা করছে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মের পরিপন্থি। বিগত কয়েক বছরে ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলোতে এলসি খোলার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। এ কারণে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, ছোট-বড় কোম্পানি এবং ব্যবসায়ীরা এলসি পরিশোধে জটিলতায় পড়েন। তবে বর্তমান সময়ে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। ফলে এলসি খোলার ক্ষেত্রে আগের জটিলতা কিছুটা কমেছে। তবুও কিছু ব্যাংক এলসি পরিশোধে গড়িমসি করছে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক আরো জানিয়েছে যে, ব্যাংকগুলোর ফান্ডেড এবং নন ফান্ডেড ক্রেডিট লাইনের সীমা নির্ধারিত রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, এই সীমার বাইরে গিয়ে এলসি খোলা যাবে না। ব্যাংকগুলোর দায়িত্ব হচ্ছে ক্রেডিট লাইনের সীমার মধ্যে থেকে এলসি খোলা এবং তা যথাসময়ে পরিশোধ করা। বাংলাদেশ ব্যাংক এই সার্কুলারে ব্যাংকগুলোকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে, সময়মত এলসির বিল পরিশোধ না করলে তা দেশের অর্থনীতি এবং বিদেশি বাণিজ্য সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, ব্যাংকগুলোর সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এলসি পরিশোধে কোনো ধরনের গড়িমসি দেশের বাণিজ্য পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ ব্যাংকগুলোর দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে এবং দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ভূমিকা রাখবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত