বাংলাদেশ-কোরিয়ার সম্পর্কোন্নয়নে নতুন সম্ভাবনার কথা উল্লেখ বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনের অর্জনকে ‘প্রত্যাশা মাফিক’ বলে মন্তব্য করেছেন। গতকাল সোমবার বিকালে বাণিজ্য উপদেষ্টার অফিস কক্ষে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং সিকের সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাতে তিনি এসব কথা বলেন। উপদেষ্টা জানান, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে এবং এই গতিকে ধরে রাখতে হবে। সেখ বশির উদ্দিন বলেন, ‘বর্তমান সরকারের ১০০ দিনের কাজ প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়েছে। বাংলাদেশে এখন ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে এবং কোরিয়ার বিনিয়োগকারীরা এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাইবেন বলে আমি আশা করি।’ সাক্ষাৎকালে সেখ বশির উদ্দিন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য, মুক্তবাণিজ্য চুক্তি এবং বাংলাদেশে কোরিয়ার বিনিয়োগ প্রসঙ্গে আলোচনা করেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা উল্লেখ করেন যে, একটি মুক্তবাণিজ্য চুক্তি হলে দুই দেশই উপকৃত হবে। তিনি আরও বলেন, ‘এই চুক্তির মাধ্যমে কেবল বাণিজ্য সম্প্রসারণই নয়, বরং জনগণের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নও সম্ভব হবে।’ উপদেষ্টা কোরিয়ান বিনিয়োগকারীদের বিশেষ করে বাংলাদেশের লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং এবং চামড়া শিল্প খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য উৎসাহিত করেন। পাশাপাশি, তিনি বাংলাদেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে আরও বিনিয়োগের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং সিকও বিনিয়োগের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের যুব জনগোষ্ঠী বৃহৎ এবং তাদের টেকনোলজি দক্ষতা বাড়াতে কোরিয়া আগ্রহী। এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমরা বাংলাদেশের যুবদের কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করছি এবং কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে অবদান রাখছি।’ রাষ্ট্রদূত আরও জানান, অন্যান্য দেশের তুলনায় কোরিয়া বাংলাদেশে বহুমুখী খাতে বিনিয়োগ করেছে এবং ভবিষ্যতে এই বিনিয়োগ আরও বাড়ানো হবে। টেক্সটাইল, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিক্স ও কারিগরি প্রশিক্ষণ খাতগুলোতে কোরিয়ার দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমান বিনিয়োগ পরিস্থিতি অত্যন্ত ইতিবাচক এবং ব্যবসার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে। কোরিয়ার বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ এখন একটি সম্ভাবনাময় গন্তব্য। বিনিয়োগকারীদের জন্য সুবিধাজনক নীতি প্রণয়ন এবং বিভিন্ন সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে আমরা ব্যবসার পরিবেশকে আরও উন্নত করতে কাজ করে যাচ্ছি।’উপদেষ্টা আরও বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য একটি নতুন আশা তৈরি করেছে। তিনি আশা করেন, বর্তমান সরকার বিদেশি বিনিয়োগের ধারাকে আরও সমৃদ্ধ করবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে। সাক্ষাতকালে বাণিজ্য উপদেষ্টা এবং কোরিয়ান রাষ্ট্রদূত মুক্তবাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা এবং এর সাথে সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ নিয়েও আলোচনা করেন। উপদেষ্টা বলেন, ‘মুক্তবাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়িত হলে কোরিয়ান বিনিয়োগকারীরা আরও বড় আকারে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে, যা বাংলাদেশে নতুন কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বয়ে আনবে।’ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতও একমত প্রকাশ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে আমরা দীর্ঘমেয়াদে সহযোগিতা করতে চাই এবং বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে আগ্রহী।’ সাক্ষাতকালে উভয়পক্ষই দুই দেশের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। সেখ বশির উদ্দিন বলেন, ‘কোরিয়ার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী এবং ফলপ্রসূ। আমি আশাবাদী যে, ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে উঠবে যা দুই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।’ দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং সিক উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশে আমাদের বিনিয়োগ দিন দিন বাড়ছে এবং আমরা দেশের বিভিন্ন খাতে অংশীদারিত্ব বাড়াতে আগ্রহী। ভবিষ্যতে এ সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’বাণিজ্য উপদেষ্টার সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতের এই বৈঠক বাংলাদেশ-কোরিয়ার অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার আশা জাগায় এবং নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার সম্ভাবনা প্রকাশ করে।