আদানির বিদ্যুৎ চুক্তিতে অনিয়মের অভিযোগ

হাইকোর্টের পর্যালোচনার নির্দেশ

প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তিতে একাধিক অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে রয়েছে করমুক্ত আমদানি নীতি, কয়লার উচ্চমূল্য, বিলম্বিত বিল পরিশোধে অতিরিক্ত সুদের চাপ এবং বিদ্যুৎ আমদানির রুটে শুল্ক স্টেশন না থাকা।

২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) আদানি পাওয়ার লিমিটেডের ঝাড়খণ্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনতে ২৫ বছরের একটি চুক্তি করে। এই বিদ্যুৎ প্ল্যান্টটি সম্পূর্ণ আমদানি করা কয়লায় পরিচালিত এবং ২০১৯ সালের মার্চে ভারত সরকার এটিকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের আওতায় এনে করছাড়ের সুবিধা দেয়। তবে এই তথ্য চুক্তির সময় গোপন রাখে আদানি গ্রুপ।

কয়লার দাম নিয়ে প্রশ্ন : পিডিবি জানিয়েছে, আদানি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তিতে কয়লার দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ধরা হয়েছে। যেখানে পায়রা, রামপাল ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীর বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লার দাম টনপ্রতি ৭৫-৮০ ডলার, সেখানে আদানি গ্রুপ ৯৬ ডলার দরে কয়লা সরবরাহ করে। দাম নিয়ে আপত্তি তোলার পর আদানি গ্রুপ কিছুটা সমঝোতার ইঙ্গিত দেয়।

শুল্ক স্টেশন ও করমুক্ত সুবিধা : শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর জানিয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর রুট দিয়ে আদানির বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসলেও এটি শুল্ক স্টেশন নয়।

ফলে শুল্ক সংক্রান্ত বিষয়গুলো যথাযথভাবে যাচাই করা হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী, আদানি গ্রুপের আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর মওকুফ নিশ্চিত করার দায়িত্ব পিডিবির। ভবিষ্যতে শুল্ক-করের বিষয় সামনে এলে সেটি পরিশোধের দায়ও পিডিবিকেই নিতে হবে। এর আগে, ২০১০ সালে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এনটিপিসি থেকে বিদ্যুৎ আমদানির সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) শুল্ক ও কর অব্যাহতির আদেশ দিয়েছিল। কিন্তু আদানি গ্রুপের ক্ষেত্রে এমন কোনো সুবিধা দেওয়া হয়নি।

বিলম্বিত বিল ও অতিরিক্ত সুদ : চুক্তি অনুযায়ী, বিলম্বিত বিল পরিশোধে আদানি গ্রুপ ১৫ শতাংশ সুদ ধার্য করেছে, যা অন্য বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে নেই। একই সঙ্গে আদানি গ্রুপ বিদ্যুতের দাম ২২ শতাংশ বৃদ্ধির নতুন দাবি তুলেছে। এর ফলে পিডিবির আর্থিক চাপ আরও বেড়েছে।

জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষার প্রশ্ন : কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেছেন, পিডিবি চুক্তির শর্তাবলী ঠিকমতো পর্যালোচনা করেনি। তিনি দাবি করেন, চুক্তির প্রতিটি ধারা ও উপধারা জনসমক্ষে প্রকাশ করা উচিত।

হাইকোর্টের পর্যালোচনার নির্দেশ : আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা চুক্তি নিয়ে ওঠা অভিযোগের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সম্পাদিত সব বিদ্যুৎ চুক্তি পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছে। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়। আগামী তিন মাসের মধ্যে পর্যালোচনার প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

চুক্তি নিয়ে বিতর্ক চলমান : পিডিবি ও আদানি গ্রুপের মধ্যে চুক্তির শর্তাবলী এবং এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় স্বার্থের সুরক্ষার প্রশ্নে এমন চুক্তির স্বচ্ছ।