রেশন কার্ডে স্বল্পমূল্যে নিত্যপণ্য দেয়ার প্রস্তাব
প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিত্যপণ্যের উচ্চ মূল্যে শ্রমিক অসন্তোষ কমাতে রেশন কার্ডের মাধ্যমে চাল, ডাল, তেলসহ জরুরি সামগ্রী স্বল্পমূল্যে বিতরণের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল-গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন। গতকাল শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক গোল টেবিল আলোচনায় এ প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়।
শ্রমিক পরিবারের ব্যয় ও ন্যূনতম মজুরি নিয়ে উদ্বেগ : বাংলাদেশ টেক্সটাইল-গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, একজন শ্রমিকের পাঁচ সদস্যের পরিবারের মাসিক খরচ প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। তবে বর্তমান ন্যূনতম মজুরি মাত্র ১২ হাজার ৫০০ টাকা, যা মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবে শ্রমিকদের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
সংগঠনের সভাপতি মাহাবুবুর রহমান ইসমাইল বলেন, বাজার পরিস্থিতির উন্নতির জন্য সরকারের উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি। রেশন কার্ডের মাধ্যমে স্বল্প মূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ শ্রমিকদের জীবনে কিছুটা স্থিতিশীলতা আনতে পারে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া ও বাস্তবায়ন সমস্যা : অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান শ্রমিকদের নিত্যপণ্য স্বল্প মূল্যে দেওয়ার দাবি মেনে নেওয়ার বিষয়ে জানান। তবে তিনি উল্লেখ করেন, টিসিবি কার্ডের মাধ্যমে ১০ লাখ শ্রমিককে স্বল্প মূল্যে নিত্যপণ্য দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও এখনও শ্রমিকদের তালিকা সরবরাহ করা হয়নি। এর ফলে উদ্যোগটি কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।
আট দফা প্রস্তাবনা-
বাংলাদেশ টেক্সটাইল-গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন তাদের আট দফা প্রস্তাবনায় উল্লেখ করেছে যে:
১. রেশন কার্ডের মাধ্যমে শ্রমিকদের চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য স্বল্পমূল্যে বিতরণ করতে হবে।
২. ইপিজেডসহ সকল গার্মেন্ট কারখানায় শ্রমিকদের অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং একই আইন প্রয়োগ করতে হবে।
৩. শ্রমিকদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সংবিধান সংস্কার করতে হবে।
৪. শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও জীবিকা রক্ষায় মালিক, সরকার ও বায়ারদের উদ্যোগে ‘জরুরি স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা’ তহবিল গঠন করতে হবে।
৫. অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য ‘সার্বজনীন কল্যাণ তহবিল’ গঠন করতে হবে।
৬. ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া এবং চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল নির্মাণ করতে হবে।
৭. তাজরীন ফ্যাশনস ও রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৮. শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীনে সকল কমিটিতে মালিকপক্ষের মনোনীতদের বাদ দিয়ে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে।
শ্রমিক অসন্তোষ ও সরকার-শ্রমিক নেতাদের মতবিরোধ : শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে শ্রমিকদের দূরত্ব নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, ১৮ দফা দাবি মেনে নেয়া সত্ত্বেও শ্রমিকরা পরদিন মজুরি দ্বিগুণ না করায় সড়ক অবরোধ করেন। সচিবের মতে, শ্রমিক নেতারা শ্রমিকদের কাছ থেকে দূরে থাকায় এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
রানা প্লাজা ও তাজরীন দুর্ঘটনার বিচার দাবি : রানা প্লাজা ও তাজরীন ফ্যাশনসের দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের বিচার এবং উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবিও অনুষ্ঠানে উঠে আসে। সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, রানা প্লাজার মালিকের জামিন হাই কোর্টে হলেও পরে চেম্বার আদালত সেই আদেশ বাতিল করেছে। এ নিয়ে সরকার শ্রমিকদের অধিকার ও ন্যায্যতা রক্ষার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক পরিবেশ তৈরি করতে এবং তাদের জীবনযাত্রার মানউন্নত করতে সরকারের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়। শ্রমিক ও মালিক পক্ষের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সমঝোতা স্থাপন করতে কাজ করারও প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হলে গার্মেন্ট শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে এবং বাংলাদেশে শ্রমিক অসন্তোষের ঝুঁকি কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।