বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সম্প্রতি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এর সাথে ৩ মিলিয়ন ইউরোর একটি অনুদান চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির আওতায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সহযোগিতায় ‘বাংলাদেশের সাথে প্রতিভা অংশীদারিত্ব সমর্থন’ শীর্ষক একটি তিন বছর মেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পটি ২০২৪ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত চলবে এবং এতে অর্থায়ন করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। বাংলাদেশ ১৯৭২ সালের ২২ জুন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এর সদস্যপদ লাভ করে। সেই থেকে আইএলও বাংলাদেশের শ্রমবাজার ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। গত ৫২ বছর ধরে আইএলও বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থা, নিয়োগকর্তা এবং শ্রমিক সংগঠনের সাথে মিলিতভাবে কাজ করছে। তাদের আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত সহায়তায় অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উৎপাদনমুখী কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই দীর্ঘদিনের অংশীদারিত্বের অংশ হিসেবে, ইআরডি এবং আইএলও একটি নতুন প্রকল্প শুরু করছে যার মূল লক্ষ্য হবে বাংলাদেশের অভিবাসী কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়ন। ইইউ-এর আর্থিক সহায়তায় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে যা বাংলাদেশের অভিবাসী কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। ইআরডির সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, প্রকল্প চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী এবং আইএলও’র কান্ট্রি ডিরেক্টর তুওমো পটিয়াইনেন। চুক্তি স্বাক্ষরের সময় বাংলাদেশে ইইউ প্রতিনিধিদলের ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশনের প্রধান মিশাল ক্রেজা, ইআরডি’র অতিরিক্ত সচিব একেএম সোহেল, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইফুল হক চৌধুরী এবং আইএলও ও সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এই প্রকল্পটি মূলত বাংলাদেশের অভিবাসী কর্মীদের ইউরোপের শ্রমবাজারের চাহিদার সাথে মানিয়ে নিতে সহায়তা করবে।
এতে স্বাস্থ্য, প্রকৌশল, আইসিটি, পরিচর্যা, অতিথি সেবা, নির্মাণ এবং কৃষি খাতের মতো বিভিন্ন পেশাগত ক্ষেত্রে দক্ষতা উন্নয়ন করা হবে। প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হল নির্বাচিত ইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর শ্রমবাজারে বাংলাদেশী অভিবাসী কর্মীদের জন্য বিভিন্ন পেশাগত ক্ষেত্রে দক্ষতা উন্নয়ন করা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীদের স্বাস্থ্য, প্রকৌশল, আইসিটি, পরিচর্যা, অতিথি সেবা, নির্মাণ এবং কৃষি খাতে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়ন করে বিদ্যমান শ্রম চাহিদার সাথে মানিয়ে নেয়ার জন্য প্রস্তুত করা হবে। বাংলাদেশের সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর এই ধরনের সহযোগিতা শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে নয়, বরং সামাজিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য এই ধরনের প্রকল্পগুলো ইউরোপসহ অন্যান্য দেশের শ্রমবাজারে প্রবেশের সুযোগ এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করছে। এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে এবং দেশের অর্থনীতিকে আরো সমৃদ্ধ করবে। বাংলাদেশের শ্রমবাজারে এ ধরনের প্রকল্পের কার্যকারিতা এবং তার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কেবল দেশের শ্রমিকদের উন্নয়নে নয়, বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রকল্পের চূড়ান্ত লক্ষ্য হল শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের রেমিটেন্স আয় বৃদ্ধি করা। এর ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা আরো গতিশীল হবে। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মধ্যে এই নতুন প্রকল্প চুক্তি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং দেশের অভিবাসী কর্মীদের আরো সুদূরপ্রসারী দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করবে।