ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত আমদানিকারকদের ঋণ পরিশোধে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যারা ২০২২ সালে বিলম্বিত ঋণ পরিশোধের শর্তে পণ্য আমদানি করেছিলেন এবং ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, তারা এই সুযোগ পাবেন। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর উদ্দেশ্যে জারি করা একটি প্রজ্ঞাপনে এই নির্দেশনা দিয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সুবিধা : প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আমদানির জন্য খোলা ঋণপত্রের ক্ষেত্রে ডলারের বিনিময় হারের কারণে সৃষ্ট ক্ষতির হিসাব নির্ধারণ করবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। ব্যবসায়ীরা তাদের ঋণ ৮ বছরের মধ্যে পরিশোধের সুযোগ পাবেন। তবে কোনো খেলাপি গ্রাহক প্রতিষ্ঠান এই সুবিধা নিতে পারবে না। ব্যবসায়ীদের আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে নিজ নিজ ব্যাংকে আবেদন করতে হবে। এ সুবিধা পাওয়ার আগে ব্যাংকগুলো নিশ্চিত করবে যে, সংশ্লিষ্ট গ্রাহক ডলারের বিনিময় হারের কারণে প্রকৃতপক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগও এসব নথি যাচাই করবে।
ডলারের দাম বৃদ্ধির প্রভাব : গত দুই বছরে ডলারের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালে ডলারের আন্তঃব্যাংক বিনিময় মূল্য ছিল ১০৬ টাকা, যা বর্তমানে ১২০ থেকে ১২৫ টাকার মধ্যে পৌঁছেছে। ডলারের এই মূল্যবৃদ্ধি আমদানিকৃত পণ্যের খরচ বাড়িয়ে দেয়, বিশেষ করে তেল, গ্যাস, কাঁচামাল এবং বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে। এর ফলে আমদানিনির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক চাপে পড়েছে এবং তাদের খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে।
ক্ষতির কারণ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত : বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার মান কমেছে। এই পরিস্থিতিতে আমদানিনির্ভর শিল্পসহ যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পণ্যের মূল্য সরকার নির্ধারণ করে দেয়, তারা উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সমস্যায় পড়ছে। নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন সক্ষমতা ধরে রাখতে এবং রপ্তানি কার্যক্রম ঠিক রাখতে ঋণ পুনর্গঠনের সুবিধা দেয়া হবে। তবে এ সুবিধা দিতে গিয়ে ব্যাংকগুলো কোনোভাবেই একক গ্রাহক ঋণসীমা লঙ্ঘন করতে পারবে না।
যেসব আমদানিকারক ২০২২ সালে বিলম্বিত ঋণ পরিশোধের শর্তে পণ্য আমদানি করেছিলেন এবং ডলারের দামের উর্ধ্বগতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারা এই সুবিধার আওতায় আসবেন।
বিশেষ করে তেল, চিনির মতো খাদ্যপণ্য আমদানিকারকরা এই সুযোগ পেতে পারেন, কারণ এসব পণ্যের দাম সরকার নির্ধারণ করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগ মূলত আমদানিকারকদের আর্থিক ঝুঁকি কমানো এবং স্থানীয় শিল্পের উৎপাদন কার্যক্রম সচল রাখার উদ্দেশ্যে নেয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত আমদানিনির্ভর ব্যবসা খাতের জন্য স্বস্তি এনে দেবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই বিশেষ সুবিধা কার্যকর হলে ডলারের দামের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি মোকাবিলায় আমদানিকারকদের জন্য এটি হবে গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ।