পোল্ট্রি ফিডের মেশিন আনার কথা বলে ৪৩২ কোটি টাকা মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে অ্যাগ্রো বিডি এন্ড জেপি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যৌথ তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। তদন্ত দলে রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ৯টি মামলা দায়ের করে। অভিযোগে বলা হয়, মেসার্স অ্যাগ্রো বিডি এন্ড জেপি ৪৬টি কন্টেইনার আমদানিতে পোল্ট্রি ফিডের ক্যাপিটাল মেশিনারি আনার মিথ্যা ঘোষণা দেয়। কিন্তু এই কন্টেইনারগুলোতে সিগারেট, এলইডি টেলিভিশন, ফটোকপিয়ার মেশিন এবং মদ আমদানি করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং দুদক সূত্র জানায়, এই আমদানি কার্যক্রমের আড়ালে প্রতিষ্ঠানটি ৪৩১.৭৫ কোটি টাকা মানিলন্ডারিং করেছে। শুল্ক ফাঁকি ও মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে এত বড় অর্থ পাচারের ঘটনা সামনে আসার পর, তদন্তের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর দীর্ঘদিন ধরে মামলাগুলো তদন্ত করে এলেও অপরাধের পুরো চিত্র স্পষ্ট করতে পারেনি। তাই দুর্নীতি দমন কমিশনের নেতৃত্বে তিন সংস্থার সমন্বয়ে একটি যৌথ তদন্ত দল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ দল মামলার তদন্ত তদারকি করবে এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
তদন্তে কী পাওয়া গেছে? মামলার নথিপত্র অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি আমদানির ক্ষেত্রে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে সিগারেট ও অন্যান্য বিলাসী পণ্য এনেছে। প্রাথমিক তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও মানিলন্ডারিংয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
কেন যৌথ তদন্ত দরকার হলো? দুদক কর্মকর্তারা জানান, এত বড় অর্থপাচারের ঘটনা মোকাবিলায় একক সংস্থার পক্ষে তদন্ত পরিচালনা করা যথেষ্ট নয়। শুল্ক ফাঁকি, মিথ্যা ঘোষণা, এবং মানিলন্ডারিংয়ের মতো অপরাধ বহুমুখী তদন্তের প্রয়োজন হয়। যৌথ দল গঠন করে, সব প্রাসঙ্গিক সংস্থা একসঙ্গে কাজ করলে তদন্ত কার্যক্রম আরো কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা : দুদক, শুল্ক গোয়েন্দা ও সিআইডি তদন্তের মাধ্যমে মামলাগুলোতে অপরাধীদের চিহ্নিত করার কাজ করছে। তারা জানিয়েছে, তদন্ত শেষে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী, দোষী প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে অর্থদণ্ডসহ জেল-জরিমানা করা হবে।
জাতীয় রাজস্ব ও অর্থনীতির ক্ষতি : এ ধরনের অর্থপাচার কেবল বৈদেশিক মুদ্রার অপচয়ই নয়, বরং দেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিলাসী পণ্য আমদানি করার মাধ্যমে বৈধ রাজস্ব আয়ের পথে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ধরনের অপরাধ রোধে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো ও কঠোর আইন প্রয়োগ করা জরুরি। যৌথ তদন্ত দল এখন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ও জালিয়াতির প্রকৃত চিত্র উন্মোচনে কাজ শুরু করবে।
সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এই তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করে বড় ধরনের অর্থপাচার রোধে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা সম্ভব হবে। ৪৩২ কোটি টাকার মতো বড় অর্থপাচার কেলেঙ্কারির ঘটনা দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য একটি সতর্ক সংকেত। তবে, যৌথ টিমের কার্যক্রম সফল হলে এই ধরনের অপরাধ রোধে ভবিষ্যতে আরো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া যাবে।