ঢাকা ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ন্যাশনাল ব্যাংকের অর্থ পুনরুদ্ধারে নতুন উদ্যোগ

তিন মাসের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা

তিন মাসের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা

ন্যাশনাল ব্যাংক ঋণখেলাপি গ্রাহকদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করেছে। ব্যাংকটির পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন জানিয়েছেন, যারা ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন, তাদের চিহ্নিত করে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক সহায়তার মাধ্যমে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আগামী সপ্তাহ থেকে সম্পত্তি অ্যাটাচমেন্ট কার্যক্রম শুরু করব। আশা করছি, আগামী তিন মাসের মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংক তার সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে।’

ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা : গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মোয়াজ্জেম হোসেন এই কথা জানান। তিনি উল্লেখ করেন, ঋণখেলাপিদের নামে-বেনামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি চিহ্নিত করা হয়েছে।

গুলশানসহ বিভিন্ন স্থানে খুঁজে পাওয়া ঋণগ্রহীতাদের ১ হাজার কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ‘যারা ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ শুরু হয়েছে,’ বলেন তিনি।

ন্যাশনাল ব্যাংকের অবস্থান ও পর্যালোচনা : ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকেও অনিয়ম ছিল, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তবে এখন সেসব অনিয়ম বন্ধ করার জন্য শক্ত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আমরা খেলাপি ঋণ আদায়ে এবং ঋণ অবলোপনের মাধ্যমে ব্যাংকটির অবস্থা পুনরুদ্ধারে কাজ করছি।’

তিনি আরো জানান, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার উন্নতি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় পাঁচটি অডিট ফার্ম কাজ করছে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ‘ন্যাশনাল ব্যাংক এতদিন যেসব অনিয়মে জড়িয়ে ছিল, সেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন আমরা রেমিট্যান্স বৃদ্ধি ও বৈদেশিক বাণিজ্যে গুরুত্ব দিচ্ছি। এর পাশাপাশি পোশাকশিল্পের পাশে দাঁড়িয়ে কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে সহযোগিতা করছি,’ যোগ করেন তিনি।

ঋণ পুনরুদ্ধারে ইতিবাচক অগ্রগতি : চেয়ারম্যানের লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, ব্যাংকটি এই বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ৯০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায় করেছে। চলতি বছরের মধ্যে আরও ৪০০ কোটি টাকার ঋণ আদায়ের লক্ষ্য রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ন্যাশনাল ব্যাংক দেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের উন্নয়নে এলসি সুবিধা প্রদানসহ বৈদেশিক লেনদেনে অবদান রাখছে। আমরা বিশ্বাস করি, ব্যাংকের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া সঠিকভাবে এগোলে এটি আবারো স্থিতিশীল অবস্থানে ফিরবে।’

প্রশাসনিক পরিবর্তন ও বর্তমান পরিস্থিতি : গত ২০ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করে। পূর্বের পরিচালকদের অধিকাংশই চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের প্রতিনিধি ছিলেন। ফলে ব্যাংকটিকে এস আলম গ্রুপের হাত থেকে মুক্ত করার মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ বিতরণ ও খেলাপি ঋণের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলা হয়, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ৪২,২৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খাতাণ্ডকলমে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২,৩৬৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২৯ শতাংশ। তবে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ বর্তমানে ১১,৬৯৮ কোটি টাকা।

ন্যাশনাল ব্যাংকের পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা : ব্যাংকটির নতুন পরিচালনা পর্ষদ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আশাবাদী যে, খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার এবং ব্যবস্থাপনার উন্নতির মাধ্যমে ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াবে।

চেয়ারম্যান মিন্টু বলেন, ‘আমরা স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। অনিয়ম বন্ধ করার পাশাপাশি গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছি। এটি সময়সাপেক্ষ, তবে আমরা আশাবাদী।’ ন্যাশনাল ব্যাংকের এই উদ্যোগ দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। তবে ব্যাংকটির পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া সফল করতে প্রয়োজন হবে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, কার্যকর নীতিমালা, এবং গ্রাহকদের আস্থা পুনরুদ্ধার।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত