চট্টগ্রাম কাস্টমসে কমেছে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ। নির্ধারিত লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে রাজস্ব কম আদায় করেছে বলে জানায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কাস্টমস সূত্র জানায়, বিগত সময়ে সরকার পতনের প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনৈতিক খাতগুলোতে। সার্বিক অবকাঠামোগত ধীরতাকেই দায়ী করছেন অনেক বিশ্লেষক।
এদিকে উন্নয়ন কাজের ধীরগতিতে শিল্পকারখানায় উৎপাদন কমছে। এ কারণে কাঁচামাল আমদানি তুলনামূলক কমে যাওয়ায় কাঙ্ক্ষিত রাজস্বও পাচ্ছে না চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ। জানা যায়, গেলো অর্থবছরে প্রথম ৫ মাসের তুলনায় এবার সংস্থাটি একই সময়ে ১ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা বেশি আদায় করলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পিছিয়ে আছে ৪ হাজার ৪২১ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছর এ ৫ মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪ হাজার ৯৭ কোটি টাকা। তবে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ আদায় করেছে ২৯ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা। আর একক মাস হিসাবে নভেম্বরে ৭ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৫ হাজার ২২৩ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও গত অর্থবছরের তুলনায় এবার একাই সময়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কিছুটা কম হওয়ায় রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সমস্যা হচ্ছে বলে দাবি কাস্টমস হাউজের। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের নভেম্বরে প্রায় ৫ হাজার ৮০০ কনটেইনার পণ্য কম এসেছে। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, বিগত সময়ের তুলনায় শুধু নভেম্বরেই ৭ লাখ ৬৪ হাজার মেট্রিক টন শিল্পের কাঁচামাল কম আমদানি হয়েছে। ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হাকিম আলী জানান, মার্কেটে চাহিদা না থাকায় উৎপাদন কম হচ্ছে। ফলে কাঁচামাল আমদানিও কমেছে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে হাসিনা সরকার পতনের পর চলমান উন্নয়ন কাজে স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে কিছু উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টরা গা-ঢাকা দিয়েছে। এতে উন্নয়ন কাজে ধীর গতি দেখা যাচ্ছে। আর এরই প্রভাব পড়ছে শিল্প কারখানাগুলোতে। বিশেষ করে বাজারের চাহিদার বিপরীতে কারখানাগুলো উৎপাদন কমিয়ে দেয়ায় কমছে কাঁচামাল আমদানিও। কেএসআরএম স্টিল প্ল্যান্ট লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, উন্নয়নমূলক কার্যক্রম কমায় পণ্য আমদানিও কমেছে।
আমদানি বাড়িয়ে উৎপাদন বাড়াতে উন্নয়নমূলক কাজ হাতে নিতে হবে। তবেই আবার ঘুরে দাঁড়াবে শিল্প। উল্লেখ্য, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭৪ হাজার ২০৪ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৬১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা এবং ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৭৭ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৬৮ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছিল চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ।
আর ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৩ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা। জাতীয় আয়ে বিশাল একটি অংশ যোগান দিয়ে থাকে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ। এর পরিমাণ বছরে ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি। মূলত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি পণ্য থেকে যে রাজস্ব আদায় হয়, সেটি জাতীয় আয়ে যুক্ত হচ্ছে। আর তাই রাজস্ব বাড়াতে চট্টগ্রাম কাস্টমসের বিদ্যমান সংকটগুলো দ্রুত কাটানোর তাগিদ দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।