ঢাকা ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে রেকর্ড

চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে রেকর্ড

আবারো কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডিলিংয়ে রেকর্ড গড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। সম্প্রতি কনটেইনার এবং কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সদ্য বিদায়ী বছরে ৩২ লাখ ৭৬ হাজার কনটেইনার এবং ১২ কোটি ৩৯ লাখ মেট্রিক টন পণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছে। এ বিষয়ে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম বন্দরকে আরও সক্ষম হিসাবে গড়ে তুলতে নতুন প্রকল্প গ্রহণ, চুক্তি স্বাক্ষরসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। নতুন বছরের প্রথম দিনে বিগত বছরের কার্যক্রমের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য যাতে বৃহত্তর স্বার্থ বিপন্ন না হয় সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে ২০২৪ সালে সর্বোচ্চসংখ্যক কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে উল্লেখ করে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্দরে ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ৬২৭ টিইইউ কনটেইনার এবং ১২ কোটি ৩৯ লাখ ৮৬ হাজার ১৪ টন কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। ব্রিফিংয়ে গত এক বছরে জাহাজ ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের চিত্র এবং প্রবৃদ্ধির তথ্য দেয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত এক বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে ৩ দশমিক ২৭ মিলিয়ন টিইইউ (২০ ফুট সমমানের) কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। ১২৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন কার্গো বা পণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছে। একইভাবে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩ হাজার ৮৬৭টি। ২০২৩ সালের তুলনায় কনটেইনারে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ, কার্গোতে ৩ দশমিক ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বহির্নোঙরে জাহাজের গড় অবস্থানকাল ১ দিনে নেমে এসেছে। বন্দর চেয়ারম্যান আরো জানান, ২০২৪ সালে এক বছরে রাজস্ব আয় হয়েছে ৫ হাজার ৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। গত বছরের রাজস্ব আয় ছিল ৪ হাজার ১৬৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ২১ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেশি হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে নিলামযোগ্য ১০ হাজার কনটেইনার ও শেডে ২৯৭টি গাড়ি রয়েছে। এসব দ্রুত নিলাম করে বন্দরের ইয়ার্ড ও শেড খালি করার প্রচেষ্টা চলছে। এছাড়া বর্তমানে ১৫২ টিইইউ কনটেইনারের পণ্য ধ্বংসের অপেক্ষায় রয়েছে। এর আগে, চলতি বছরের জুলাই এবং আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল ছিল পুরো বাংলাদেশ। তারপর সেপ্টেম্বরে দেশের বিশাল অংশ ছিল ভয়ংকর বন্যায় বিপর্যস্ত। আর এ তিন মাস দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের মূল ক্ষেত্র চট্টগ্রাম বন্দরে ছিল চরম অচলাবস্থা; ডেলিভারি নেমে এসেছিল শূন্যের কোটায়। তবে সংকটের মাঝেও বছর শেষে পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়িয়ে কনটেইনার ও কার্গো পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে রেকর্ড গড়ার দোরগোড়ায় চট্টগ্রাম বন্দর।

বিশেষ করে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩০ লাখ ৭০ হাজার কনটেইনারের পাশাপাশি ১১ কোটি ৪৫ লাখ মেট্রিক টন কার্গো পণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছে এখানে, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং গত বছরের তুলনায় চলতি বছর বেড়েছে। গত বছর কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৩০ লাখের মতো। তবে এ বছর সেটি ৩২ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। সবশেষ ২০২১ সালে ৩২ লাখ কনটেইনার এবং ১১ কোটি ৬৬ লাখ মেট্রিক টন কার্গো পণ্য হ্যান্ডলিং করে রেকর্ড গড়েছিল চট্টগ্রাম বন্দর। অবশ্য ডলার সংকটসহ নানামুখী জটিলতায় পরবর্তী দুবছর কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি হয়নি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ডলার সংকট কাটায় এলসি খোলার বিধিনিষেধ পর্যায়ক্রমে তুলে নিচ্ছে সরকার। আর তাই বেড়েছে আমদানির পাশাপাশি রফতানিও। তবে বেশি পণ্য নিয়ে বড় আকৃতির জাহাজ আসার সংখ্যা বাড়ায় প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না জাহাজ আগমনের পরিসংখ্যানে।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক শিপিং ম্যাগাজিন লয়েড’স লিস্ট অনুযায়ী বিশ্বের ব্যস্ততম একশটি বন্দরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর ৬৭তম অবস্থানে রয়েছে। কনটেইনার হ্যান্ডলিং তুলনামূলক কম হওয়ায় গত তিন বছর ধরে এই তালিকায় ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছিল চট্টগ্রাম বন্দর। এরইমধ্যে ডলার সংকটের মুখে বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে লাগাম টানায় ভাটা পড়েছিল বন্দরের কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে। ২০২৩ সালে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ৩০ লাখ ৫০ হাজার এবং কার্গো হ্যান্ডলিং ১২ কোটি ২ লাখ মেট্রিক টনে নেমে এসেছিল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত