গত সপ্তাহে দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেনে অংশ নেয়া যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে তার থেকে বেশি। এমন বাজারে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েছে ‘পচা’ বা বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে না পারা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার শীর্ষ ১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫টিই ‘জেড’ গ্রুপের। এর মধ্যে শীর্ষ তিনটি স্থানই জেডের দখলে রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে না পারায় জেড গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলো দাপট দেখানোর সপ্তাহে সব থেকে বড় দাপট দেখিয়েছে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড। ২০২০ সালের পর থেকে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে না পারা এই কোম্পানিটি গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশের কাছে আগ্রহের শীর্ষে চলে আসে।
এতে একদিকে কোম্পানিটির শেয়ারের ক্রেতা বেড়ে যায়, অন্যদিকে শেয়ার বিক্রির চাপ কমে যায়। ফলে সপ্তাহজুড়েই কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে। এমনকি প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে দাম বাড়ার শীর্ষ স্থানটিও দখল করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহজুড়ে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের শেয়ার দাম বেড়েছে ৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। টাকার অঙ্কে প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ২ টাকা ৮০ পয়সা। এতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ৬৫ কোটি ৮৫ লাখ ৭০ হাজার ৫৫৩ টাকা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৯ টাকা ২০ পয়সা, যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে ছিল ৬ টাকা ৪০ পয়সা। শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি ২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের দশমিক ৫ শতাংশ নগদ ও আড়াই শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয়। তার আগে ২০১৯ সালে ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার, ২০১৮ সালে ২০ শতাংশ বোনাস শেয়ার, ২০১৭ সালে ৩ শতাংশ নগদ ও ১২ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এভাবে প্রতিবছর বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়ে কোম্পানিটি শেয়ার সংখ্যা বাড়িয়েছে। তবে ২০২০ সালের পর বিনিয়োগকারীদের আর লভ্যাংশ দিতে পারেনি। ২৩৫ কোটি ২০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের এই কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা ২৩ কোটি ৫২ লাখ ৩ হাজার ৭৬৯টি। এর মধ্যে ৩০ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ আছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৫৪ দশমিক ৩১ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে এবং ১৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে। ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের পরেই গত সপ্তাহে দাম বাড়ার তালিকায় ছিল ২০২০ সালের পর বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দিতে না পারা আর এক প্রতিষ্ঠান খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং। লোকসানে নিমজ্জিত এই কোম্পানিটির শেয়ার দাম গত সপ্তাহজুড়ে বেড়েছে ২৯ দশমিক ১১ শতাংশ। ১৯ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ দাম বাড়ার মাধ্যমে পরের স্থানে রয়েছে ইয়াকিন পলিমার। এই প্রতিষ্ঠানটিও ২০২০ সালের পর বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। এছাড়া গত সপ্তাহে দাম বাড়ার শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় থাকাণ্ডলিগাসি ফুটওয়্যারের ১৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ, রূপালী ব্যাংকের ১৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সের ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, হামি ইন্ডাস্ট্রিজের ১২ দশমিক ৯০ শতাংশ, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ১২ দশমিক ২২ শতাংশ, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলের ১১ দশমিক ৩৪ শতংশ এবং ওয়ান ব্যাংকের ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ দাম বেড়েছে।