টানা তিন বছর ধরে দেশের মানুষের প্রকৃত আয় কমছে। তার বিপরীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। ফলে এক বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে দেশের মানুষ। কিন্তু মানুষের আয় সেভাবে বাড়েনি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জানুয়ারির পর থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো মাসেই মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি মজুরি বৃদ্ধির হার। প্রতি মাসে গড়ে যত মজুরি বেড়েছে, মূল্যস্ফীতি ছিল তার চেয়ে বেশি। ফলে সাধারণ ও সীমিত আয়ের মানুষের বাজার থেকে নিত্যপণ্য ও সেবা কেনার সামর্থ্য কমেছে। মূল্যস্ফীতি এক ধরনের করের মতো। গত বৃহস্পতিবার সরকার নতুন করে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে। এতে আরেক দফা জীবনযাত্রার খরচ বাড়বে এমন আশঙ্কায় পড়েছে সীমিত আয়ের মধ্যবিত্ত পরিবার। উচ্চ মূল্যস্ফীতির তুলনায় মজুরির হার কম হলে দারিদ্র্যসীমার ওপরে মোট জনগোষ্ঠীর ১০ শতাংশ মানুষ অতিঝুঁকিতে থাকে।
পরিসংখ্যান যা বলছে : বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যউপাত্ত অনুসারে, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ওই মাসে জাতীয় মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৯২ শতাংশ। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বাড়লেও মজুরি বেড়েছে তার চেয়ে বেশি হারে। তাই মূল্যস্ফীতির চাপ মানুষের ওপর ততটা পড়েনি। কিন্তু এর পরের মাস থেকেই মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেনি মজুরি বৃদ্ধির গতি। ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির কাছাকাছি ছিল মজুরি বৃদ্ধির হার।
পরিস্থিতি পাল্টে যায় ২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধে এসে। ওই বছরের আগস্টে জ্বালানি তেলের দাম হঠাৎই ৪০ শতাংশের বেশি বাড়ানো হয়। ফলে ওই মাসেই মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। এরপর মূল্যস্ফীতির চাকার গতি আর থামানো যায়নি। কিন্তু মজুরির বৃদ্ধির গতি সেই অনুযায়ী বাড়েনি। ২০২৩ সালে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ। কিন্তু ওই বছর মজুরি বৃদ্ধির হার কোনো মাসেই ৮ শতাংশ ছাড়ায়নি। ৭ শতাংশের মধ্যেই তা আটকে ছিল। সর্বশেষ ২০২৪ সালে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ। গত জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে উঠেছিল, যা ছিল সাড়ে ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে ২০২৪ সালের ১২ মাসের মধ্যে প্রথম আট মাস মজুরি বৃদ্ধি হার ছিল ৭ শতাংশের ঘরে। শেষ চার মাস ৮ শতাংশের ওপরে ছিল এই হার। মজুরিনির্ভর বিশাল জনগোষ্ঠীর ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ পড়ে বেশি। গ্রাম-শহর নির্বিশেষে ১৪৫টি নিম্ন দক্ষতার পেশার মজুরির ওপর এই হিসাব করে থাকে বিবিএস। বিবিএস বলছে, দেশের প্রায় ৮৬ শতাংশ মানুষ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। এমন কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা ৬ কোটির মতো।