দফায় দফায় বৈঠক করলেও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক ও ভ্যাট কমানোর সুখবর পাচ্ছে না উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, সরকার যদি শুল্ক-ভ্যাট না কমায় তবে তারা শিগগির প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হবেন। যদিও তারা পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের ওপর চাপ তৈরি করতে চান না। এ অবস্থায় সরকার শুল্ক-ভ্যাট সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসবে বলে প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের। প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যে বাড়তি মূসক ও শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিতে দ্বিতীয় দফায় গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) নেতারা। এর আগে একই দাবিতে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর প্রথম বৈঠকে বর্ধিত ভ্যাট ও শুল্ক কমানোর আশ্বাস পাওয়ার দাবি করেছিলেন ব্যবসায়ীরা।
তবে গতকাল দ্বিতীয় বৈঠকের পর ব্যবসায়ীরা শোনান হতাশার কথা। শুল্ক ও ভ্যাট না কমালে শিগগির প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন তারা। বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান, এনবিআর সদস্য ড. মো. আবদুর রউফ (মূসক নীতি) ও দ্বিতীয় সচিব (মূসক) মো. বদরুজ্জামান মুন্সী উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী বলেন, আমার মনে হয় রেগুলেটরদের ভালো করে বোঝাতে সক্ষম হচ্ছি না। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। ফুড আইটেমের ওপর অবশ্যই ভ্যাট ও সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি বাড়ানো যৌক্তিক নয়। এনবিআর চেয়ারম্যানকে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করেছি। আমরা লসের সম্মুখীন হয়েও পুরোনো দামে পণ্যসামগ্রী রেখেছি। যদিও ভ্যাটের বোঝা বেড়েছে। বেশি রেটে ভ্যাট দিতে হচ্ছে। আপনাকে হতাশ দেখাচ্ছে, বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে কি না- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে আহসান খান চৌধুরী বলেন, বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। উনারা (এনবিআর) আমাদের কাছ থেকে সময় নিচ্ছেন। উনারা বাজেটের কথা বলছেন। আমরা কাজ করে যাবো, হয়তো আমাদের আরো বেশি সহ্যশীল হতে হবে। সহনীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। ‘ভোক্তার জন্য পণ্যের দাম যখন বাড়াতে হয় অবশ্যই মনে দুঃখ লাগে। খারাপ লাগে’- যোগ করেন তিনি। ব্যবসায়ীরা এনবিআর ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করবে জানিয়ে সংগঠনটির এই নির্বাহী সদস্য বলেন, যদি ট্যাক্স বাড়িয়ে দেয়া হয় তাহলে প্রক্রিয়াজাত পণ্যের চাহিদাও কমে যাবে। আমরা স্বল্পমূল্যে ভোক্তার কাছে পণ্য উপস্থাপন করতে চাই। দাবি না মানলে ব্যবসায়ীরা কী করবেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কর্মসূচি দেয়া বা আন্দোলন করা আমাদের সাজে না। বারবার আমাদের কষ্টের কথা মানুষের সামনে উপস্থাপন করবো। ব্যবসায় যদি মুনাফা থাকে তাহলে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবো। মুনাফা যদি কম হয়, বাংলাদেশে অন্য ব্যবসা আছে, আমরা সে সব ব্যবসার দিকে ধাবিত হবো। বাপার সভাপতি এমএ হাশেম বলেন, ফিনিশড প্রোডাক্টের ওপর যখন ট্যাক্স বাড়বে অটোমেটিকেলি দাম বাড়বে। দাম বাড়লে ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাদের সেল কমে যায়, আমরা ট্যাক্স কম দিতে বাধ্য হই। শ্রমিক ছাঁটাই করতে বাধ্য হই। পুরো অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব পড়ে।
পুরো জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি এনবিআর চেয়ারম্যানকে বুঝিয়েছি। আশা করি, আমরা উনার কাছ থেকে ভালো একটা সমাধান পাবো। তিনি আরো বলেন, কয়েকদিনের মধ্যে যদি এর সমাধান না হয়, তাহলে আমাদের পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হবো। আর কতদিন লস দেবো? বাংলাদেশ বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভুইয়া বলেন, আমরা এনবিআরকে বারবার বিরক্ত করার চেষ্টা করছি। চেয়ারম্যানকে (এনবিআর) বললাম, আপনার কাছ থেকে আমরা আশ্বস্ত হয়েছি। কিন্তু কার্যকারিতা বাস্তবে দেখতে না পেরে আমরা আপনাকে আবার বিরক্ত করতে এসেছি। একটা কথা আছে, না কাঁদলে মায়েও বাচ্চাকে দুধ দেয় না।