ঢাকা রোববার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সবজির বাজার স্থিতিশীল

উল্টো চিত্র মাছ-মাংসসহ নিত্যপণ্যে

উল্টো চিত্র মাছ-মাংসসহ নিত্যপণ্যে

শীতকালীন শাক-সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহে এখন অনেকটাই স্থিতিশীল রাজধানীর সবজি বাজার। তবে একেবারেই উল্টো চিত্র মাছ, মাংসসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের বাজারে। গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় সব ধরনের মাছ ও মাংসের দাম বেড়েছে। চাল, ডাল, তেল, মসলার দামও বাড়তি। রোজার আগে সবকিছুর দাম আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবজি বাজারে অনেকটা স্বস্তিতে কেনাকাটা করছেন ক্রেতারা। বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৪০-৫০ টাকা, করলা ৪০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা, মুলা ১৫-২০ টাকা, লতি ৫০ টাকা ও পটোল ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে কেজি প্রতি পেঁপে ৩০ টাকা, গাজর ২৫ টাকা, টমেটো ২০-২৫ টাকা, শিম ২০ টাকা, শালগম ২০ টাকা, মটরশুঁটি ৮০ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি ধনেপাতা ২০-৩০ টাকা, পেঁয়াজকলি ২০-২৫ টাকা, পাতাসহ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। আর মানভেদে প্রতি পিস ফুলকপি ২০-২৫ টাকা, বাঁধাকপি ২৫-৩০ টাকা, ব্রকলি ৩০-৪০ টাকা এবং লাউয়ের জন্য গুণতে হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা। সবজির দামের নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে আলু ও পেঁয়াজের বাজারেও। বর্তমানে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকায়। আর কেজিতে পাঁচ টাকা কমে খুচরায় মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৪৫-৫০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়। স্থিতিশীল রয়েছে কাঁচা মরিচের দাম। খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০-৭০ টাকায়, আর পাইকারিতে ৩০-৪০ টাকা। এছাড়া বাজারে লাল শাকের আঁটি ১০ টাকা, পুঁই শাক ২০-২৫ টাকা, লাউশাক ৩০ টাকা, মুলা শাক ১০ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকা, মেথি শাক ১০ টাকা ও পালং শাক বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়। আগের তুলনায় অস্থির হয়ে উঠেছে মাছের বাজার। বিশেষ করে ইলিশ মাছের দাম শুনে অন্যদিকে হাঁটা শুরু করেন ক্রেতারা?। বর্তমানে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ টাকায়। এছাড়া দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার ৮০০ টাকা, ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৮০০-১ হাজার ৯০০ টাকা হারে বিক্রি হচ্ছে। আর ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৩০০-১ হাজার ৪০০ টাকা ও ৩০০-৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য গুণতে হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকা পর্যন্ত। রাজধানীর বাবুবাজারে সানা উল্লাহ নামে এক মাছ বিক্রেতা বলেন, ‘ইলিশ মাছের সরবরাহ বাড়েনি। তবে দাম বেশি হওয়ায় চাহিদা কমেছে। অন্যান্য মাছের দামও গত সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে। দেশি ছোট মাছের কেজি বেড়েছে ৫০-৬০ টাকা। বড় রুই-কাতলা মাছ কেজি প্রতি ৩০-৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাজারে প্রতি কেজি রুই মাছ ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতল ৪০০-৪৫০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০-৬০০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০-৫৫০ টাকা, চাষের কৈ ২৪০-২৮০ টাকা, কোরাল ৭০০-৮০০ টাকা, টেংরা ৫৫০-৭০০ টাকা, ও তেলাপিয়া ২০০-২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও প্রতি কেজি বোয়াল মাছ ৭০০-৮০০ টাকা, পোয়া ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০-৪৫০ টাকা, আইড় ৭৫০-৮০০ টাকা, দেশি কৈ ১ হাজার ২০০-১ হাজার ৫০০ টাকা, শিং ১ হাজার ৪০০-১ হাজার ৫০০ টাকা, শোল মাছ ১ হাজার টাকা এবং নদীর পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। এদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় সব ধরনের মাংসের দাম বেড়েছে ১০-৩০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে প্রতি কেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০-১ হাজার ২৫০ টাকা কেজি দরে। আর প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০-৮০০ টাকা করে। এছাড়া ওজন অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ২০০-২২০ টাকা, কক মুরগি ৩০৫-৩১০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০-৫৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা এবং সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা করে। মাংসের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে হারুন গোস্ত বিতানের বিক্রেতা মো. হারুন বলেন, ‘দাম এখন কেজি প্রতি ৫-১০ টাকা বাড়ছে। রোজা এলে আরো বাড়বে। কারণ চাহিদা অনেক কিন্তু জোগান কম। দাম বাড়লেও কিন্তু মানুষের কাছে গরু-খাসির মাংসের চাহিদা কমে না। তাছাড়া ফার্ম থেকে এখন বেশি দরে গরু-খাসি কিনতে হয়। খামার মালিকরা যদি দাম বাড়ায় আমাদেরও সেই হারে বাড়াতে হয়। রমজান আসার আগেই বাজারে তেল-চালসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য মজুত শুরু করছে ব্যবসায়ীরা। ক্রেতারা বলছেন, রমজানের আগে ফের অস্থির হয়ে পড়েছে তেলের বাজার। চালের বাজার ভোগাচ্ছে কয়েক মাস ধরে। গত তিন মাসের ব্যবধানে কেজি প্রতি সব ধরনের চালের দাম পাঁচণ্ডসাত টাকা বেড়েছে। পুরান ঢাকার কলতাবাজারে মুদি মালামাল কিনতে আসা সাহেদ আলম নামে একজন ক্রেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার ছয় মাস পার হলেও এখনো চাল-তেলের সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি। রমজান মাসে সাধারণ চালের চাহিদা কম থাকে। তবে গত বছর রোজার আগে সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দেয় ব্যবসায়ীরা। এবার সেই প্রবণতা শুরু হয়েছে দুই মাস আগে থেকেই। অন্যদিকে এখন থেকেই বাজারে তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। খোলা তেল পাওয়া যায় না বললেই চলে। ছোটখাটো মুদি দোকানের তেল না থাকলেও সুপার শপে ঠিকই তেল পাওয়া যায়।’ রিপন মজুমদার নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ‘রোজার আগেই তেল-চালের বাজারে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, তাতে রোজায় কী হবে বলা মুশকিল। সরকারের উচিত, এখনই ব্যবসায়ীদের লাগাম টেনে ধরা। সব ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া। না হলে রোজায় নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জন্য চলা কষ্টকর হয়ে পড়বে। এই সরকারের কাছে কিন্তু আমাদের বেশি প্রত্যাশা নেই। তারা যদি শুধু নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কমায় তাতেই আমরা সন্তুষ্ট।’ চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহ ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে। বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৮২-৮৪ টাকা, আটাশ ৬০-৬২ টাকা, মোটা স্বর্ণা ৫২-৫৬ টাকা, নাজিরশাইল ৭৬-৮৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর নাজিরাবাজারের চাল বিক্রেতা শরিফ আহমেদ বলেন, ‘চালের দাম কমার বদলে উল্টো বেড়ে যাচ্ছে। মিল পর্যায়ে তদারকি না থাকাই সমস্যা হয়েছে। তদারকি না বাড়ালে সামনে চালের দাম আরো বাড়বে বলে জানান এই ব্যবসায়ী। অন্যদিকে তেলের বাজারের অবস্থা আরো করুণ। দাম বাড়ানোর এক মাস পরও বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট কাটেনি। সরেজমিনে রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বোতলজাত পাঁচ লিটারের তেল কিছুটা পাওয়া গেলেও এক ও দুই লিটারের বোতলজাত তেল পাওয়া যাচ্ছে না পর্যাপ্ত পরিমাণে। হাতে গোনা কয়েকটি দোকানে পাওয়া গেলেও তা নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত