ঢাকা সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫, ১০ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে

বললেন বাণিজ্য উপদেষ্টা
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে

বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশকে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে সুষ্ঠুভাবে উত্তরণ নিশ্চিত করার জন্য যথাসম্ভব সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে যথাসম্ভব চেষ্টা করছি। সম্প্রতি সচিবালয়ে তার কার্যালয়ে জাতীয় সংবাদ সংস্থার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ২০২৬ সালের নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায় থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের বিভিন্ন দিক এবং পরে এ ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বাণিজ্য উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায় থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের অভিমত সম্পর্কে তিনি প্রশ্ন তোলেন যে, বেসরকারি খাত কেন বছরের পর বছর ধরে এই বিষয়টি নিয়ে নিরব ছিল এবং জোরালো কোনো আওয়াজ তোলেনি। এর আগে, ২০২৪ সালে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায় থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারীসহ বিভিন্ন কারণে এটি বিলম্বিত হয়। এটা সত্য যে, আমি বেসরকারি খাতের দাবির সঙ্গে একমত বা দ্বিমত পোষণ করতে পারছি না। সুতরাং, এটি একটি ‘দ্বান্দ্বিক’ পরিস্থিতি। বশির উদ্দিন আরও বলেন, আমরা যদি তাদের সঙ্গে একমত হই, তাহলে ‘প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো আবার ঘুমিয়ে পড়বে। উত্তরণ বিলম্বিত করা মোটেও সরকারের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে না। তাদের (বেসরকারি খাত) এটি মেনে নিতে হবে।

তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের তিনটি মানদ-েই উত্তীর্ণ হয়েছে যদিও এটি একটি ভিন্ন যুক্তি যে, সেগুলো সঠিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নাকি ভুল তথ্যের উপর ভিত্তি করে নেয়া হয়েছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের অনিয়মের কারণে সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে। আমাদের টিমের সদস্যরা আন্তরিকতা ও দেশপ্রেমের সঙ্গে কঠোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন এবং ইনশাআল্লাহ, আশা করি আমরা দেশের জন্য একটি কল্যাণকর পরিস্থিতিতে পৌঁছাতে সক্ষম হব।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদিও সব সংস্কার করা সম্ভব নয়, তবে অবশ্যই কিছু বাস্তবায়ন করা হবে। বাকিগুলো গতিশীলভাবে এগিয়ে যাবে। এদিকে, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের একটি অংশসহ অনেকেই স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়া কয়েক বছর পিছিয়ে দেয়ার পক্ষে। তারা যুক্তি দিচ্ছেন, অর্থনীতির ক্ষেত্রে মহামারীর তীব্র প্রভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গত কয়েক বছর ধরে বিদ্যমান উচ্চ বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবেলার জন্য সময়ের প্রয়োজন। সম্প্রতি এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, উত্তরণের বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সময়সূচি মেনে জাতিসংঘের মর্যাদা অর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়া শিল্পের উপর প্রভাব ফেলবে কিনা সে বিষয়ে সরকার বিশেষজ্ঞদের মতামত বিবেচনা করে তা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব আরও উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে দেয়া সুবিধাগুলো উত্তরণের পরও তিন বছর ধরে বহাল থাকবে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উত্তরণ লাভের জন্য তিনটি পূর্বশর্তই পূরণ করেছে।

মুক্তিযুদ্ধের পর অর্থনীতির ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে শূন্য-শুল্ক ও কোটা সুবিধার মতো বিভিন্ন সুবিধা পেতে দেশটি ১৯৭৫ সালে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছিল। এই সুবিধাগুলো বাংলাদেশকে বর্তমানে চীনের পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম করেছে। এলডিসি-পরবর্তী অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা প্রত্যাহারের কারণে বাংলাদেশ বার্ষিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি মূল্যের বাণিজ্য হারাতে পারে। এ পর্যায়ে বাংলাদেশকে পণ্য সরবরাহের উপর কমপক্ষে ১২ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।

বর্তমানে, বাংলাদেশের ৭৮ শতাংশ রপ্তানি ৩৮টি দেশে স্বল্পোন্নত বাণিজ্য সুবিধা ভোগ করে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এরই মধ্যেই আশ্বাস দিয়েছে যে, তারা ২০২৯ সাল পর্যন্ত আরও তিন বছর ধরে বাংলাদেশের জন্য এলডিসি বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখবে, যা একটি মসৃণ উত্তরণের ক্ষেত্রে সক্ষম করার জন্য একটি গ্রেস পিরিয়ড হিসেবে বিবেচিত হবে। যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া কিছু শর্ত ছাড়া একই রকম প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত