পোশাক শিল্প খাতের শ্রমিকদের ঈদুল ফিতর আনন্দময় করতে যথাযথ বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে। বিজিএমইএ প্রশাসক মো: আনোয়ার হোসেন জানান, পাওনা পরিশোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ২৭ মার্চের মধ্যে ৯৯.৫৩ শতাংশ কারখানা শ্রমিকদের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পরিশোধ করেছে। আর ৮৩ দশমিক ২০ শতাংশ কারখানা মার্চ মাসের আংশিক বেতন দিয়েছে। ৯৪.৭৮ শতাংশ কারখানা বোনাস পরিশোধ করেছে। তিনি এজন্য তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি আরো জানান, বিজিএমইএ’র অনুরোধের প্রেক্ষিতে সরকার আগাম প্রস্তুতি নিয়ে ব্যাংকগুলোকে প্রণোদনার অর্থ ছাড় করতে নির্দেশ দেয়ার কারণে উদ্যোক্তারা নির্বিঘ্নে ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন, মার্চ মাসের আংশিক-পূর্ণ বেতন এবং উৎসব ভাতা পরিশোধ করতে সক্ষম হয়েছেন। বিশেষ করে ছাড়ের অর্থ প্রথমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানাগুলোকে ও পরে বড় কারখানাগুলোকে দেয়ার কারণে এবছর পোশাক খাতে বেতন-ভাতা পরিশোধকে ঘিরে তেমন কোন সংকট সৃষ্টি হয়নি।
এজন্য তিনি অর্থ উপদেষ্টা, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা, বাণিজ্য উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়নবিষয়ক বিশেষ সহকারী, সেনাবহিনী, বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এবং মিডিয়াসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেছেন, তাদের সকলের ঐকান্তিক সহযোগিতায় এবারও শ্রমিক ভাই-বোনেরা উৎসবমুখর পরিবেশে পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে যাচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, ঈদের আগে বেতন-ভাতা বিষয়ে সমস্যা হতে পারে এরকম ৪৪৫টি কারখানা প্রতিষ্ঠানকে ক্লোজ মনিটরিংয়ের আওতায় এনে সমস্যার ধরন বুঝে সমাধানের উদ্যোগ নেয় বিজিএমইএ। বিজিএমইএ এর সরাসরি হস্তক্ষেপে সমস্যা কটিয়ে প্রায় শতাধিক কারখানার শ্রমিকদের বেতনভাতা প্রদান নিশ্চিত করা হয়। উল্লেখ্য, পোশাক খাতে সর্বমোট চালু কারখানার সংখ্যা ২১০৭টি। এগুলোর মধ্যে ঢাকা অঞ্চলে ১৭৬৯টি এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৩৩৮টি কারখানা রয়েছে। জরুরি শিপমেন্টের জন্য ব্যস্ততা থাকায় কিছু কারখানা ২৮ মার্চ এবং কিছু কারখানা আগামী ২৯ মার্চ বেতন-ভাতা পরিশোধ সম্পন্ন করবে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, প্রায় শতভাগ পোশাক কারখানায় মার্চ মাসের আংশিক-পূর্ণ বেতন ও ঈদ বোনাস পরিশোধ সম্পন্ন হবে। ঈদের ছুটিতে মহাসড়কগুলোকে যানযট কমানোর জন্য কারখানাগুলোর শ্রমিকদের ধাপে ধাপে ঈদের ছুটি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তিনি রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমসহ দেশের রপ্তানি বাণিজ্য সচল রাখতে সরকারি ছুটির দিনে ইপিবি, চট্টগ্রাম বন্দর, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ, আইসিডি কমলাপুর, ঢাকা কাস্টমস, মংলা কাস্টমস, বেনাপোল কাষ্টমস ও পানগাঁও কাস্টমস হাউজ এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট কার্যালয় এবং একইসঙ্গে এসব কাস্টমস হাউজ ও শুল্ক স্টেশন-সংশ্লিষ্ট বন্দর, ব্যাংকের শাখা খোলা রাখার জন্যও সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
বিজিএমইএ প্রশাসক এছাড়াও বিজিএমইএ এর অনুরোধের প্রেক্ষিতে আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে উত্তরবঙ্গগামী যাত্রীদের ভ্রমণের সুবিধার্ধে স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করায় বাংলাদেশ রেলওয়েকে এবং মহাসড়কগুলোতে বিশেষ বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু করার জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। এদিকে গত ২৭ মার্চ পর্যন্ত ফেব্রুয়ারির বেতন পরিশোধ করেছে ২৭৬৮ পোশাক কারখানা। দেশের তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতের অধীনে থাকা ২ হাজার ৭৬৮টি প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের ফেব্রুয়ারির বকেয়া বেতন পরিশোধ করেছে।
২৭ মার্চ সকাল ১০টা পর্যন্ত ফেব্রুয়ারির বেতন দেয়নি ১২২টি কারখানা। এছাড়া এখনো ঈদ বোনাস দিতে পারেনি ৭২৩টি কারখানা। জানুয়ারি বা তারও আগের বেতন বকেয়া রয়েছে ৩০টি কারখানায়। শিল্প পুলিশের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরে আরও জানানো হয়েছে, বর্তমানে দেশে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ এবং বেপজার অধীন মোট দুই হাজার ৮৯০টি পোশাক কারখানা চালু রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি মার্চের জন্য ৪২২টি কারখানা শ্রমিকদের অর্ধেক বেতন অগ্রিম পরিশোধ করেছে। শ্রমিকদের বেতন পরবর্তী মাসের প্রথম সাত কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধের কথা থাকলেও এখনো কিছু কারখানা তা মানতে পারেনি। যদিও শ্রম আইন অনুযায়ীই এ বিধি রয়েছে।
তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতের ২ হাজার ১৬৭টি কারখানা এরই মধ্যে ঈদুল ফিতরের বোনাস পরিশোধ করেছে। এখনো ৭২৩টি কারখানা ঈদ বোনাস পরিশোধ করতে পারেনি, যা মোট কারখানার প্রায় ২৫ শতাংশ। শিল্প পুলিশ সূত্র জানায়, পাটকলসহ অন্য শিল্প কারখানাগুলো মিলিয়ে দেশের মোট ৯ হাজার ৬৯৫টি কারখানার মধ্যে ঈদুল ফিতরের বোনাস পরিশোধ করেছে ৬ হাজার ৬৭৩টি প্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে মার্চের বেতন পরিশোধ করেছে ১ হাজার ৮৩৫টি কারখানা। এখনো ৭ হাজার ৮৬০টি কারখানায় মার্চের বেতন বকেয়া রয়েছে। এটি মোট কারখানার প্রায় ৮১ দশমিক ৭ শতাংশ। সরকারের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ না করায় ১২টি কারখানার মালিকের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। এসব কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ না করা পর্যন্ত বিদেশ যেতে পারবেন না।