মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের জেরে টালমাটাল অবস্থা বৈশ্বিক শেয়ারবাজারগুলোর। একই অবস্থা এশিয়ার শেয়ারবাজারেরও। সাংহাই থেকে টোকিও এবং সিডনি থেকে হংকং সব শেয়ারবাজারগুলো দরপতনের মধ্যে রয়েছে। এশিয়ার বাজারে গতকাল সোমবারের দরপতন কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গতকাল সোমবার একপর্যায়ে চীনের মূল ভূখণ্ডে সাংহাই কম্পোজিট ইনডেক্সের সূচক কমেছে আট শতাংশ পর্যন্ত। হংকংয়ের হ্যাং সেংয়ের সূচক কমে ১৩ শতাংশ। আর দিন শেষে জাপানের নিক্কি ২২৫ সূচকের পতন হয়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। ৪ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে অস্ট্রেলিয়ার এএসএক্স ২০০ শেয়ারবাজারের। দক্ষিণ কোরিয়ার কোসপাইয়ে সূচক কমেছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। এশিয়ার শেয়ার বাজারগুলোর এ দরপতনকে ‘ব্লাডবার্থ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন বিবিসির বিশ্লেষকরা। এদিকে ইউরোপিয়ান শেয়ারবাজারগুলো খোলার পর পরই সূচকের দরপতন দেখে। এর মধ্যে ব্যাংক ও প্রতিরক্ষা ফার্মগুলোর শেয়ারের দরপতন সবচেয়ে বেশি হয়েছে। গত সপ্তাহে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন। দেশ ও পণ্য ভেদে ১০ থেকে ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের মসদনে বসা ট্রাম্প। এরপর থেকেই শেয়ার বাজারগুলোর দরপতন শুরু হয়, যা অব্যাহত রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে বড় ধাক্কা খায় এশিয়ার বিভিন্ন দেশ। কারণ এ সব দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে গুরুত্বপূর্ণ বাজার হিসেবে গণ্য করে। মার্কিন মুল্লুকে পোশাক থেকে শুরু করে গাড়ি রপ্তানি করে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতি থেকে বাদ পড়েনি তাদের পুরোনো মিত্র এশিয়ার দেশ দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানও। দেশ দুটির ওপর ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে তারা। এছাড়া উন্নয়নশীল ভিয়েতনামের ওপর ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এছাড়া কম্বোডিয়ায় ৪৯ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ৩৬ শতাংশ ও চীনের ওপর ৫৩ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। বিনিয়োগ ফার্ম ভ্যানগার্ডের এশিয়া প্যাসিফিকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কিয়ান ওয়াং বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এশিয়া। যদিও আলোচনার কিছু সুযোগ থাকতে পারে।’ বিবিসি বলছে, এশিয়ার অর্থনীতি সংবেদনশীল। এ ভূখণ্ডের দেশগুলোর ভয়, বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধ বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা আনতে পারে। এমনকি কমসংস্থানও কমিয়ে দিতে পারে। যা এশিয়ার দেশগুলোর রপ্তানিকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
ট্রাম্পের শুল্ক নীতির ফলে চীন, হংকং ও তাইওয়ানের শেয়ার বাজারের বিনিয়োগকারীরা দরপতনের ভয়ে রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান সাচের পূর্ভাবাস অনুযায়ী, আগামী ১২ মাসের মধ্যে মন্দার মুখে পড়বে আমেরিকা, এমন সম্ভাবনা প্রায় ৪৫ শতাংশ। একই সঙ্গে একই সময়ে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমবে। অন্যান্য ওয়াল স্ট্রিট ফার্মগুলোও একই কথা বলছে। বিশ্বখ্যাত মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মর্গ্যান যুক্তরাষ্ট্রসহ বৈশ্বিক মন্দার সম্ভাবনা দেখছে। তাদের মতে, মন্দার সম্ভাবনা প্রায় ৬০ শতাংশ। এক নোটে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, এমন অবস্থা বৈশ্বিক ও এশিয়ার অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক। বিশেষ করে ছোট অর্থনীতির দেশগুলোর জন্য। দীর্ঘ ও স্বল্প মেয়াদে মন্দা হতে পারে। বিবিসি বলছে, ভিয়েতনাম থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। দেশগুলোর প্রধান রপ্তানি বাজার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকেই দেখে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির তথ্যানুযায়ী, দেশটি প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি করে। আর গত সপ্তাহে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন।